শ্রমিকদের আন্দোলনে সরকার ষড়যন্ত্র দেখছে
বেতন বৈষম্যের দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল রাখা তাদের অন্যতম দাবি। এ লক্ষ্যে তারা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা সভা, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি প্রদান করে যাচ্ছেন। ঢাকায় এখন চলছে গণ-শ্রমিকদের মহাসমাবেশের প্রস্তুতি। যাইহোক, সরকারী সংস্থাগুলি বিশ্বাস করে যে এই আন্দোলন বিরোধী দলগুলিকে উস্কে দিয়েছে এবং ইন্ধন দিয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের দাবিকে পুঁজি করে ১৯৯৬ সালের মতো ‘জনগণের প্লাটফর্ম’ তৈরি করে বড় আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে তারা। এর পেছনে প্রশাসন ক্যাডারের কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারে।
একটি গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা দেশের বিভিন্ন স্থানে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলের বাইরে সমাবেশ করছেন, উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, যা সরকারি কর্মচারীদের আচরণবিধির পরিপন্থী।
সরকারী কর্মচারীদের দাবির যৌক্তিকতা পর্যালোচনা এবং মূল্যস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন মূল্যস্ফীতি ভাতা প্রদানের সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এ ছাড়া আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোর নেতাদের ওপর নজরদারি বাড়াতে এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ‘সরকারবিরোধী চক্র’ যাতে সরকারকে বিব্রত না করে এবং আন্দোলনকারীদের উসকানি দিতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।
আন্দোলনরত শ্রমিক সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে সারাদেশে অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। নবম বেতন কমিশন গঠনসহ পাঁচটি দাবি আদায়ে কয়েকদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে আলটিমেটাম দিয়েছে সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ। আগামী ১ মার্চ ঢাকা মহানগরীর সকল দপ্তর, অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরের কর্মচারীদের আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, অষ্টম বেতন স্কেলে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রায় শতভাগ বাড়ানো হয়েছে। তবে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে বেতন স্কেল বাস্তবায়নের প্রথম থেকেই কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ, বিশেষ করে একাদশ ও বিশ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। রাজশাহীতে সাম্প্রতিক এক সমাবেশে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন, একাদশ ও বিশ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের সম্মিলিত অধিকার সচেতনতা ফোরাম, রাজশাহী মেট্রোপলিটন টিচার্স সোসাইটি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন এবং তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারী সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম, ২১ জানুয়ারি সিলেট, ২৬ জানুয়ারি বরিশালে এবং ৪ ফেব্রুয়ারি খুলনায় জড়ো হয়েছেন তারা। ১১ ফেব্রুয়ারি রংপুরে, ১৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশের কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে নবম বেতন কমিশন গঠন, সচিবালয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সমান কাজের জন্য সমান মর্যাদা, পদবি পরিবর্তন এবং অভিন্ন নিয়োগ বিধি প্রণয়ন। এ সংগঠনের সভাপতি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, জাতীয় জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও উচ্চ পর্যায়ের সহকারী সৈয়দ সারওয়ার হোসেন, সংগঠনের মহাসচিব ও ঢাকা বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্টে কর্মরত নোমানুজ্জামান আল আজাদ।
অন্যান্য সংগঠনের দাবি প্রায় অভিন্ন। বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের মহাসচিব খায়ের আহমেদ মজুমদার বলেন, আবাসন, পরিবহন, শিক্ষা, ওষুধসহ অন্যান্য খাতে মূল্যবৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে সরকারি কর্মচারীরা বিক্ষোভ করছেন।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমলাদের বেতন-ভাতা ধাপে ধাপে বাড়লেও কর্মচারীদের বেতন বাড়বে না কেন? চলমান আন্দোলনে সব সংগঠনের সমর্থন রয়েছে। তারাও কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজি হয়েছেন। তাই সরকারি চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।