বেতন স্কেল নিয়ে ইবি কর্মকর্তাদের অসন্তোষ, উপাচার্যের বাসভবনে হট্টগোল

0

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তাদের বেতন স্কেলের নীতিমালা নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনকে সরকারি নিয়ম লঙ্ঘন করে নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনে তাণ্ডব করেছে দেড় শতাধিক কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার দুপুর ২টার পর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা শেষে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর ধরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা সহকারী রেজিস্ট্রার ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার বা সমমানের পদে বেতন স্কেল ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৫০ হাজার টাকা দাবি করে আসছেন। কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে হরতাল, মানববন্ধন, মৌন মিছিল, অবস্থান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন আন্দোলন করেছেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে ২৪৭তম সিন্ডিকেট সভায় তৎকালীন প্রশাসন শর্তসাপেক্ষে দাবি মেনে নেয়। এটি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরের ফলাফল এবং কর্মসংস্থানের সময়কালের উপর কিছু শর্ত আরোপ করে।

প্রশাসন আরও বলেছে যে সরকারী অডিট আপত্তি এবং কোনো প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দিলে তারা সুবিধাটি প্রত্যাহার বা সংশোধন করবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তের কারণে কিছু কর্মকর্তা এই বেতন স্কেলের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে বঞ্চিত দলের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এরই মধ্যে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ২০২২-২৩ মেয়াদের নির্বাচনে ক্ষমতার রদবদল হয়েছে। এরপর আবারও তাদের দাবির আলোকে বর্তমান প্রশাসন তাদের সাম্প্রতিক ২৫৪তম সিন্ডিকেট সভায় সবার জন্য বেতন স্কেলের দাবি মেনে নেয়। তবে এই বেতন স্কেল প্রদানের নীতি নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, পদোন্নতি নীতিমালা অনুযায়ী কোনো কোনো কর্মকর্তাকে পিয়ন, নিম্ন সহকারী, উচ্চ পর্যায়ের সহকারী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শাখা কর্মকর্তা হিসেবে সহকারী রেজিস্ট্রার হতে পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। একজন কর্মকর্তা তখন ডেপুটি রেজিস্ট্রার হতে পারেন। শিক্ষাগত যোগ্যতার উপর নির্ভর করে এর জন্য কমপক্ষে ৬ থেকে  ৭ বছর সময় প্রয়োজন।

এদিকে কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক পে-স্কেল নীতিমালায় উল্লেখ আছে, সহকারী রেজিস্ট্রার হওয়ার ছয় বছর এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার হওয়ার পাঁচ বছর পর স্কেল কার্যকর হবে।

মঙ্গলবার সাধারণ সভায় তারা নীতিমালা ও এর জন্য গঠিত কমিটি নাকচ করে দেন। তারা কাজের বয়স ৬২ বছর এবং ক্যাম্পাসের সময় কমানোরও দাবি জানান।

দুপুর ২টার দিকে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এটিএম এমদাদুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুটের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক কর্মকর্তা উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালামের বাসায় যান। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, সমিতির সাবেক সভাপতি শামসুল ইসলাম জোহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রায় দেড় ঘণ্টা তারা উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থান করেন। এ সময় উপাচার্য আবারও কমিটি গঠনের কথা বললে কর্মকর্তারা তোলপাড় শুরু করেন। প্রক্টর হট্টগোল থামাতে কথা বললে সমিতির নেতাদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় কর্মকর্তা পিন্টু লাল দত্ত অন্যদের বাসার সামনে বসতে বলেন। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে সমিতির সভাপতি এমদাদ নীতি ও কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বাসা ত্যাগ করেন।

অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এটিএম এমদাদুল ইসলাম বলেন, “সরকারের নতুন বেতন কমিশনের ঘোষণা লঙ্ঘন করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, আমাদের পদোন্নতির ছয় বছর পর যে স্কেল কার্যকর করা হবে তা বিবেচনা করা হবে। হয়। সরকারী নীতি অনুযায়ী এটা একটা জঘন্য অপরাধ।এই অপরাধ বিগত ভিসি করেছেন।তিনিও অপরাধ করছেন।এর ফলে সরকার চাকরি শেষে এই টাকা কেটে নেবে।তাই আমরা এই লেখা নিষিদ্ধ করছি। একইসঙ্গে আমি কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছি।’

উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, একটি কমিটি মামলাটি বিশ্লেষণ করে সুষ্ঠুতার ভিত্তিতে আইনগতভাবে পাওয়া নিশ্চিত করবে।

উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম বলেন, “আগের প্রশাসন কিছু লোককে বেতন স্কেল দিয়েছিল। কেউ কেউ বঞ্চিত হয়েছিল। এতে অন্যদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। তাই সবাইকে দিয়েছি। আইনগত যা হবে তাই করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *