আন্দোলনে নতুন গতি, সরকার বলছে ‘উস্কানি’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠলেও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণ করতে চায় না সরকার। কারণ সরকার মনে করছে, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষের উসকানি রয়েছে। সিলেটের স্থানীয় প্রশাসনকে এরই মধ্যে উসকানিদাতাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আন্দোলনকারীদের সরকারের সঙ্গে আলোচনায় রাজি করানো; যাতে তারা প্ররোচনার ফাঁদে পা না দেয় তা নিশ্চিত করা। নেতাদের ক্ষুধার্ত ও অসুস্থদের সন্ধান করতে এবং যে কোনও প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়াতেও বলা হয়েছে। ক্যাম্পাসে বিদেশিদের আনাগোনা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন শাবিপ্রবির প্রক্টর।
অন্যদিকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও অনড়। লাগাতার অনশনের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। দীপু মনি ভার্চুয়াল আলোচনায় অনশন বন্ধের আহ্বান জানালেও শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ফলে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ হয়নি। উপাচার্যের বিদায় নিশ্চিত না হলে চলমান আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের মতে, চলমান আন্দোলনকে ঘিরে কোনো ষড়যন্ত্র বা সন্ত্রাসের দায় তারা নেবে না। আলোচনায় সময় নিয়ে উপাচার্যকে রক্ষার কৌশল অবলোকন করছেন তারা। এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে সরকারের অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের কেউই উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিদায়ের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। ইউজিসির দুই সদস্য রোববার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই ঘটনার জন্য উপাচার্যের ব্যক্তিগত দায় নেই। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত প্রভোস্টকে অপসারণ করেছেন তিনি। ছাত্রদের মধ্যে থেকে ডিউটিতে থাকা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। এরপরই তৎপর হয় পুলিশ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ একজন দক্ষ উপাচার্য। তার আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের কোনো অনিয়মের খবর পাওয়া যায়নি। গত শনিবার শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী একই কথা বললেন ।
শিক্ষক সমিতির চার সিদ্ধান্ত : শাবিপ্রবির চলমান সংকট নিয়ে বৈঠক করেছে শিক্ষক সমিতি। রাত সোয়া ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের সামনে সভা শেষে সমিতির সভাপতি তুলসী কুমার দাস সভার চারটি সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন। সভায় ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর পুলিশের বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এতে বলা হয়, সরকারের উচিত একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া; শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙতে যা যা করা দরকার তা অবিলম্বে করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে বলা হয়, উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি সরকারের এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে। এ বিষয়ে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের সহিংসতায় না জড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে। শিক্ষকদের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয়।
সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে: সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেও শাবিপ্রবি শিক্ষকরা তাদের দাবিতে কার্যত নীরব ছিলেন। দীর্ঘ ১১ দিন পর গত শনিবার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক সংগঠন ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক’। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ কমিটির সাবেক ছাত্রলীগ নেতারাও সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার এক ভার্চুয়াল সভায় দেশ-বিদেশে অবস্থানরত ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেন।
সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে ছাত্রকর্মী ইয়াসির সরকার বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধির সঙ্গে আমাদের শেষ কথা হয়। তিনি অনশন ভাঙার এবং সম্ভব হলে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমরা তাকে বলেছি, এটা কি আরও বেশি? এত মানুষের জীবনের চেয়ে নিজের অবস্থান রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ?এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি।