ওমিক্রন ঠেকানোর ছোক কতটা মজবুত
ওমিক্রন ঠেকানোর ছোক কতটা মজবুত
নতুন ধরনের করোনাভাইরাস ওমিক্রন ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিস্থিতি বিশেষভাবে উত্তাল। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সাড়ে চার লাখ, ফ্রান্সে দুই লাখের বেশি এবং যুক্তরাজ্যে এক লাখ আশি হাজার মানুষের শরীরে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ওমিক্রন সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি দেশ কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বিশ্বে বাতিল হয়েছে চার হাজার ৪০০টি ফ্লাইট। এর মধ্যে ২,৫০০ একাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।প্রতিবেশী ভারতেও ভয়ঙ্কর হুড তুলেছে ওমিক্রন। সংক্রমণ বাড়ছে। বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চার হাজার ছাড়িয়েছে। রবিবার থেকে, দেশটির রাজ্য সরকার জনসাধারণের চলাচলের উপর বেশ কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। দেশেও ওমিক্রনের ভয় বাড়ছে। এ পর্যন্ত ১০ জনের ওমিক্রন শনাক্ত করা হয়েছে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার মানিকগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সংক্রমণ পরিস্থিতি বাড়লে আবারও লকডাউন দেওয়া হতে পারে। তবে ওমিক্রন সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগ কতটা প্রস্তুত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে ওমিক্রন সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রস্তুতির অভাব রয়েছে। তাদের অভিমত, আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে বাংলাদেশে যাত্রীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ছাড়া কোনো প্রস্তুতি নিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। এ ছাড়া ওমিক্রন ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়লেও সেসব দেশ থেকে আগতদের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।একই সঙ্গে হাসপাতালে চিকিৎসাসহ সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে অন্ধকারে রয়েছেন সবাই। দ্রুত এই ঘাটতি দূর করতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন তারা। ৬০ শতাংশ বেড়েছে সংক্রমণ: দেশে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ শতাংশ বেড়েছে। রোববার এক ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর থেকে দেশে সংক্রমণের হার বাড়ছে।২ শতাংশ অতিক্রম করেছে। গত এক সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে ৬০ শতাংশ। সেই সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুও।জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর বলেন, যাদের করোনা পজিটিভ এসেছে তাদের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত করা হয়েছে। ওমিক্রন সংক্রমণ এখনো খুব বেশি ছড়ায়নি বলে জানান ডাঃ আলমগীর। এর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, “গত এক সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা ৮০ শতাংশ বেড়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতালে ভর্তির হারও বেড়েছে। এই মানুষগুলো যদি ওমিক্রনে আক্রান্ত হতো, তাহলে হাসপাতালের সংখ্যা কত? ভর্তির হার বাড়ত না।এর কারণ হল ওমিক্রন আক্রান্ত দেশগুলিতে হাসপাতালে ভর্তির হার কম।এর ফলে ওমিক্রন এখনও দেশে ছড়িয়ে পড়েনি।আইইডিসিআর কর্মকর্তা বলেন, এটি ডেল্টা সংক্রমণ। স্বাস্থ্য বিভাগ কতটা প্রস্তুত: বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া ওমিক্রন মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ আকাশ, সমুদ্র এবং স্থল বন্দরে স্ক্রিনিং এবং আফ্রিকার সাতটি দেশের লোকদের পৃথকীকরণের জন্য প্রস্তুত নয়। হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনদের কাছে চিঠি পাঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কার্যক্রম এই আদেশ জারির মধ্যে সীমাবদ্ধ। কারণ সড়ক, গণপরিবহন, শপিংমলগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক ছাড়াই হাঁটছেন। বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়। চলছে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মসূচিও। সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, “দেশের বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরে স্ক্রিনিং জোরদার করা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগের। ওমিক্রনকে মোকাবিলা করতে সম্প্রতি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।