লাভে ফিরছে বিপিসি

0

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অব্যাহত রয়েছে। এর সুফল পেতে শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। গত কয়েকদিনে প্রতি লিটার ডিজেলে লাভ হচ্ছে দুই থেকে পাঁচ টাকা। কোম্পানিটি সাম্প্রতিক তেল বাণিজ্য বিশ্লেষণ করে একটি প্রস্তাব প্রস্তুত করছে। শিগগিরই তা জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হবে। সরকার বিপিসির প্রস্তাব বিবেচনা করে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেবে।

জ্বালানি বিভাগের মতে, বিপিসি প্রায় টানা ছয় বছর (জুন ২০১৪ থেকে জুন ২০২১1) ৪৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সংস্থাটি জানায়, বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে চলতি বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জ্বালানি তেল বিক্রিতে প্রায় ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। ৩ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ানো হয়।

এদিকে গত দুই সপ্তাহ ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। এখন ব্রেন্ট তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৭২ টাকায় নেমে এসেছে। বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, গত তিন-চার দিন ধরে আন্তর্জাতিক দামে প্রতি লিটার ডিজেল দুই থেকে পাঁচ টাকা করে মুনাফা করছে কোম্পানিটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে করোনার নতুন রূপ ছড়িয়ে পড়ায় তেলের দাম আরও কমতে পারে। ফলে বিপিসির লাভের খাতা আবারও ফুলে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় দেশেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো উচিত।

জানতে চাইলে বিপিসির একজন ব্যবস্থাপক বলেন, ডিজেল-কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির ফলে বিপিসি ব্রেক ইভেন্টে (লাভ না লোকসান)। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় তারা এখন লাভবান হচ্ছেন। বিপিসি গত কয়েকদিন ধরে প্রতি লিটারে দুই থেকে পাঁচ টাকা করে মুনাফা করছে।

বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদের সঙ্গে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, ডিজেলের দাম বিপিসি নির্ধারণ করে না। তারা শুধু লাভ-ক্ষতির হিসাব করে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করে। সে বিচার করে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় দাম বাড়বে না কমবে।

বিপিসির একটি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক তেল বাণিজ্যের হিসাব নিয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। শিগগিরই তা জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হবে।

সাত বছরের লাভ, পাঁচ মাসের ক্ষতি: জ্বালানি বিভাগের মতে, বিপিসি ২০১-১৫৪ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা লাভ করেছে। এ টাকার বড় অংশ জমা হয়েছে সরকারি কোষাগারে। সরকার গত দুই অর্থ বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে।

সংস্থাটি জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে গত জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ডিজেল বিক্রিতে ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

বুয়েটের শিক্ষক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম তামিম বলেন, হুট করে তেলের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। আরেকটু পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন ছিল। কারণ ২০ দিনের মধ্যে দাম কমতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, বিপিসি পাঁচ মাসে এক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার কারণে তেলের দাম বাড়িয়েছে। ফলে জনজীবনের ব্যয় বেড়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। তেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে পরিবহন ভাড়া ২৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে। সরকার দেশে দাম কমাবে কি না সেটাই দেখার বিষয়।

সরকারের নির্দেশ অনুসারে, চাহিদার ৫০ শতাংশ জিটিজেড চুক্তি থেকে এবং বাকিটা আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন উত্স থেকে সংগ্রহ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *