খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়াল
চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। বিশেষ সুবিধা ও ছাড় দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণ কমছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স না থাকায় খেলাপি ঋণ এই রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৫৬,৩৯০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০.১১ শতাংশ। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের ৯২ দিনে খেলাপি বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে দৈনিক বেড়েছে ২৬৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
শুক্র ও শনিবার নিয়মিত সাপ্তাহিক ছুটি বাদে প্রতি কার্যদিবসে বেড়েছে ৩৭৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০.১১ শতাংশ।
তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা বেড়ে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এক বছর আগে অর্থাৎ গত বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। সে অনুযায়ী এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩০ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।
ডলার সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬.২৭ মিলিয়ন ডলার বা ৪৭৬.২ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
বাকি ছয়টি কিস্তির মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তি আগামী নভেম্বরে ছাড়ার কথা রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ধাপে ধাপে কমানোর শর্ত অন্তর্ভুক্ত করেছে সংস্থাটি। ২০২৬ সালের মধ্যে, বেসরকারী খাতে অ-পারফর্মিং ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারী খাতের ব্যাংক ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের হার ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর হতে হবে। খেলাপি কমাতে না পারলে ব্যাংকগুলোকে শাখা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া উচিত।
বর্তমান গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স এবং খেলাপি ঋণ দুটি বড় সমস্যা। খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের আরও ভূমিকা নিতে হবে।