প্রতি ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ১৫-২০ টাকা
কি এমন ঘটল, তিন-চার দিনে ডিমের দাম বেড়েছে প্রতি ডজন ১৫ টাকা? গত বুধবার এক ডজন ডিম কিনলাম ১৪০ টাকায়। আজ ১৫৫ টাকায় কিনতে হয়েছে। এটা আর সহ্য করা যায় না।” কারওয়ান বাজারে ডিম কেনার সময় বেসরকারি চাকরিজীবী আলী আহাদ এর কন্ঠস্বর।
ডিমের দামের আকস্মিক অস্থিরতায় আলী আহাদের মতো অনেকেই ক্ষুব্ধ। একের পর এক নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা তাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে বাজারে সব ধরনের মাছ ক্রেতাদের পকেট খালি করে দিচ্ছে। এতে আমিষের চাহিদা মেটাতে ডিমের দিকে চোখ রাখছিলেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এর মধ্যে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা আরও চাপে পড়েছেন।
গত শুক্রবার থেকে হঠাৎ করেই ডিমের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। বাজারেও সরবরাহ কম। অন্যদিকে মুরগির উৎপাদন কমেছে বলে দাবি পাইকারি ব্যবসায়ীদের। তা ছাড়া সম্প্রতি মাছের দাম বেড়েছে। এতে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। সে হারে সরবরাহ বাড়েনি।
রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজার, হাতিরপুল ও তেজকুনিপাড়া এলাকার বাজারে বাদামি ডিমের চাহিদা বেশি বলে দেখা গেছে। এর মধ্যে এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। আর পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা দরে। অন্যদিকে খামারের সাদা ডিম ১০ টাকা বেড়ে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে স্থানীয় ছোট বাজার ও পাড়া-মহল্লায় ডজন ডজন বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা বেশি দরে।
তবে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বড় বাজারে ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা ও পাড়া-মহল্লায় দেড়শ টাকায়। তেজকুনিপাড়ার মা-বাবর দোয়া-২ এর বিক্রয়কর্মী জানান, শুক্রবার থেকে প্রতি ডজনে ১৫৫ টাকার বেশি কিনছেন তিনি। এ কারণে বিক্রি করতে হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। মগবাজারের চাঁদপুর স্টোরের মালিক ইসমাইল পাটোয়ারী জানান, দুই-তিন দিন ধরে দাম বেড়েছে। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি ডজন ১৬০ টাকা।
কারওয়ান বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে কিছুটা কম দামে। এই বাজারের ভাই ভাই ডিমের দোকানের বিক্রেতা সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, দুই দিন ধরে দাম বেড়েছে। গত শুক্রবার হঠাৎ করে ডজন বেড়েছে ১০ টাকা। দাম বাড়ার আসল কারণ ভোক্তা ও উৎপাদকরা বলতে পারবেন। তিনি বলেন, আগে সাধারণত একটি গাড়িতে ৭০ থেকে ৮০ হাজার ডিম বাজারে আনা হতো। এখন ৪০ থেকে ৫০ হাজারের বেশি আসে না। বড় দোকানে আগে যেখানে দুই গাড়ি ডিম আসত, এখন একগাড়ি আসে। এতে বাজারে সরবরাহ কিছুটা কমেছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়। সে অনুযায়ী প্রতি ডজনের দাম দাঁড়ায় ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। সংস্থাটির তথ্যমতে, এক মাসে ডিমের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, তিনটি কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে ডিমের চাহিদা সব সময়ই বেশি থাকে। সাম্প্রতিক বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। মাছের দামও চড়া। এ জন্য ভোক্তারা ডিমের দিকে ঝুঁকছেন। অন্যদিকে প্রতিদিনের চাহিদা অনুযায়ী ডিম উৎপাদন হচ্ছে না। কারণ ডিম উৎপাদনকারী প্রাপ্তবয়স্ক মুরগি বিক্রি করছেন খামারিরা। তাছাড়া ডিমের চাহিদা ও উৎপাদনের কোনো সঠিক হিসাব নেই। এ কারণে চাহিদার সামান্য বৃদ্ধি বাজারে দ্রুত প্রভাব ফেলে।