নিয়ম লঙ্ঘন করে নিয়োগ বন্ধ

0

শুধু একটি নিয়মের অভাবে প্রায় সাড়ে চার হাজার সরকারি চাকরি আটকে আছে। নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য বিধিমালা ২০১৪ এর সংশোধন চলছে। এসব বিধিমালার খসড়া বেশ কিছুদিন ধরে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মধ্যে ঘুরছে। কিন্তু কিছুই চূড়ান্ত নয়। ফলে নন-ক্যাডার পদপ্রত্যাশীদের অপেক্ষমাণ তালিকা বাড়ছেই। তারা হতাশায় ভুগছেন।

পিএসসি সূত্র জানায়, প্রতিটি বিসিএসে ‘নন-ক্যাডার’ পদের পাশাপাশি ‘ক্যাডার’ পদের সংখ্যা উল্লেখ করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করতে চায় পিএসসি। এ জন্য গত বছরের ২৩ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠায় পিএসসি। তবে নন-ক্যাডার পদের প্রার্থীরা এ সিদ্ধান্তে একমত হতে পারেননি। তারা চায় আগের মতো পরবর্তী বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি না আসা পর্যন্ত প্রতিটি বিসিএস পাসকারীদের মধ্য থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগ করা হোক।

তারা বলছেন, নতুন নিয়ম কার্যকর হলে প্রতিটি বিসিএসে নন-ক্যাডার প্রার্থীদের নিয়োগ কমবে। বিপুল সংখ্যক প্রার্থী সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হবেন। ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার তালিকায় থাকা প্রার্থীরা গত বছর ও এ বছর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিএসসির গেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা ৬ দফা দাবিও তুলে ধরেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগের জন্য ২০১০ সালের বিধিমালা ২০১৪ সালে একবার সংশোধন করা হয়েছিল। নিয়ম অনুসারে, বিসিএস বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডারের পাশাপাশি নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিবরণ এবং সংখ্যা উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে আগের ২৮ থেকে ৪৪তম বিসিএস বিজ্ঞপ্তিতে নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিস্তারিত ও সংখ্যা উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য সরকার বিধিমালা সংশোধন করে ৩৪তম বিসিএস পর্যন্ত নন-ক্যাডার নিয়োগ বৈধ করেছে।

এখন একইভাবে ৩৫ থেকে ৪৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগ বৈধ করার কথা ভাবছে সরকার। সে জন্য বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সংশোধিত নিয়ম চূড়ান্ত না হওয়ায় সব নন-ক্যাডার পদ স্থগিত রয়েছে।

জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, বিধিমালা সংশোধনের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই প্রথম সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, নন-ক্যাডার প্রার্থীরা এতে উপকৃত হবেন। তারা বুঝতে না পেরে এতদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল। বর্তমান কমিশন প্রার্থীবান্ধব। ৪০তম বিসিএস থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নন-ক্যাডার নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।

নতুন নিয়ম এখনো অনুমোদন না হওয়ায় ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। বিধিমালা জারি হলেই ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারের ফলাফল বিধিমালার আলোকে প্রকাশ করতে পারবে পিএসসি। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটিও প্রস্তুত রয়েছে।

এরই মধ্যে চার দফায় নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে চার হাজার দাবি পেয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ৮ হাজার ১৬৬ জন উত্তীর্ণ প্রার্থীর মধ্যে নন-ক্যাডার পদে ৪০তম বিসিএসের জন্য অপেক্ষা করছেন ৬ হাজার প্রার্থী।

পিএসসিতে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০ প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী; অর্থাৎ নবম শ্রেণির শূন্য পদের তালিকা এসেছে। এ ছাড়া দশম গ্রেডে ৭৫০০, একাদশ গ্রেডে ৮০টি এবং দ্বাদশ গ্রেডে ১ হাজার ৭০০ পদ রয়েছে। এর আগে এত বড় সংখ্যক নন-ক্যাডারে বিসিএস থেকে নিয়োগের সুপারিশ করার নজির নেই।

পিএসসি কর্মকর্তারা জানান, নন-ক্যাডার নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা চেয়ে গত বছরের ২৩ আগস্ট পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের আগে যে কোনো শূন্যপদ বিসিএসে নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা যাবে না। কোনো বিসিএস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় হলে কোনো শূন্য পদ বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

এখন থেকে নতুন বিসিএস বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও উল্লেখ থাকবে। চিঠিতে ৩৫ থেকে ৪৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার নিয়োগের বৈধতা চাওয়া হয়েছে। নতুন বিধিমালা সংশোধনের পর সরকার তা চূড়ান্ত করলে পরবর্তী নন-ক্যাডারে নিয়োগ দিতে পারবে পিএসসি। এখনো নিয়ম পাস না হওয়ায় হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর ভাগ্য ঝুলে আছে।

৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদের প্রার্থী মোহাম্মদ আসিফ নূর বলেন, বিধিমালার গেজেট হওয়ার আগেই পিএসসি আমাদের নিয়োগের সুপারিশ করতে পারে। এতে কোনো আইনি বাধা নেই।

তামান্না তানিয়া খান নামের আরেক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ৪০তম বিসিএসের সার্কুলার ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জারি করা হয়েছিল। করোনার দুই বছরসহ বিভিন্ন কারণে এখন ৬ বছর পার হয়ে যাচ্ছে। আমাদের অনেকেরই সরকারি চাকরির বয়স পেরিয়ে গেছে। আমি কোনো নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারব না। তাই আমরা চাতক পাখির মতো এই নিয়োগের দিকে তাকিয়ে আছি।

তিনি বলেন, নিয়মে আমাদের ভাগ্য ঝুলছে। এখন শুনছি এ সংক্রান্ত নথি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জনপ্রশাসনে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আমাদের মধ্যে ৮ হাজার ১৬৬ জন যারা ৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *