জ্বালানি খাত নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা।নতুন এলসি খুলতে রাজি নয় সরকারি ব্যাংক!

0

ডলার সংকটে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বড় ধরনের বিপাকে পড়েছে। বিদেশি তেল সরবরাহকারীদের বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় তারা চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত তেল সরবরাহ করতে রাজি হচ্ছে না। এদিকে, সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড একটি তেলের চালান বাতিল করেছে। চলতি মাসে তাদের ৩০ হাজার টন ডিজেল সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় তারা বিপিসিকে চিঠি দিয়ে তেল সরবরাহের কার্গো বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায়। আগামী জুনে, ৯০,০০০ টন ডিজেলের তিনটি কার্গো চালান এবং ২৫,০০০ টন ফার্নেস অয়েলের আরেকটি কার্গো চালান সরবরাহ করার কথা রয়েছে। ভাইটাল একটি চিঠিতে জানিয়েছে যে বকেয়া না পাওয়া গেলে এটি সেই চারটি চালান সরবরাহ করবে না।  বিপিসির কাছে তাদের বকেয়া পাওনা ১.০৪ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ডলার ১০৬ টাকা যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৬০ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

শুধু ভিটল নয়, ইন্দোনেশিয়ার বুমি সিয়াক জাপিন (বিএসপি) এবং ভারতের ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইসিএল) সহ অন্যান্য তেল সরবরাহকারীরা লিখেছেন যে তারা বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে জ্বালানি সরবরাহ করবে না। পরিশোধিত তেল এসব কোম্পানি সরবরাহ করে। এমন পরিস্থিতির কারণে মঙ্গলবার ঢাকায় তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোচায়না সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে বৈঠক করেন বিপিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বকেয়া পরিশোধ করা হলে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে তেল সরবরাহ নিশ্চিত করা না হলে দেশে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বিপিসি-তে তেল সরবরাহকারী সাতটি কোম্পানি ১৫৩.০৪ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে। ডলারের হিসাবে ১০৬ টাকা, এর পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ৭৪২ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার টাকা! বিপিসি প্রতি মাসে ১৭ থেকে ১৮টি চালানে পাঁচ লাখ টন পরিশোধিত এবং এক লাখ অপরিশোধিত তেল আমদানি করে।

বকেয়া পরিসংখ্যান দেখিয়ে বিপিসির পক্ষ থেকে ১১ মার্চ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনা করে দেশের অভ্যন্তরে পরিবহন, কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে যদি বলা হয়। প্রয়োজনীয়, বিষয়টিকে বিশেষ বিবেচনা করতে বলা হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বর্তমান পরিস্থিতিতে তেল আমদানির জন্য এলসি খুলতে রাজি নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে আমদানি মূল্য ব্যাংক পরিশোধ করতে পারছে না। বর্তমানে সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক মাসে চার থেকে পাঁচটি এলসি খুললেও অগ্রণী ব্যাংক দুটির বেশি এলসি খুলতে চায় না। চিঠিতে প্রশ্ন করা হয়েছে কেন বিপিসির মতো শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এলসি খুলতে অনীহা দেখাচ্ছে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল হোসেন বলেন, “সব সমস্যার মূলে রয়েছে ডলার সংকট। পর্যাপ্ত ডলারের অভাবে তেল আমদানির বিপরীতে সরবরাহকারীদের বকেয়া পরিশোধ করা যাচ্ছে না। পতন বন্ধ না করলে সংকট আরও বাড়বে। হুন্ডির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হচ্ছে জ্বালানি খাতে প্রধান সমস্যা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক (অর্থ) মোজাম্মেল হক বলেন, বিষয়টি অপারেশন বিভাগ বলতে পারবে। এ বিষয়ে পরিচালক (অপারেশন্স) খালিদ আহমেদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে, নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বিপিসির একজন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিপিসি নিয়মিতভাবে আমদানি করা জ্বালানি তেলের দাম ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত পরিশোধ করেছে। এর আগে এ ধরনের কোনো খেলাপি ছিল না। তবে ভাইটালসহ আরও দু-একটি কোম্পানি বকেয়া রয়েছে। তারা তেল দিতে চায় না। তাদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে পেট্রো চায়নার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।

ভিটলের দেশীয় এজেন্ট ট্রান্স বাংলা গ্রুপের ট্রান্স বাংলা লজিস্টিকস লিমিটেড। সংগঠনের নেতা মো. এজাজুর রহমান বলেন, “জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে বিল পরিশোধের একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তেলের মূল্য পরিশোধ করা যায়নি। এ কারণে ভাইটাল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের পক্ষ থেকে নোটিশ জারি করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর।বকেয়া পরিশোধ না করা হলে জুন মাসে ৯০ হাজার টন তেলের চারটি কার্গো আসার কথা থাকলেও অর্ডার বাতিল করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এজেন্ট হিসেবে আমাদের প্রধান কাজ হল ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করা।কোন সমস্যা হলে আমরা সমাধানের চেষ্টা করি।এবারও আমরা একই কাজ করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *