উত্তর দিক থেকে আসছে রসালো লিচু

0

মধুমাস জ্যৈষ্ঠের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এর আগেই রং দেখাতে শুরু করেছে দেশের বিখ্যাত লিচু রাজ্য দিনাজপুরের লিচু গাছ। বেশিরভাগই মাদ্রাসি বর্ণের। সাধারণত এই লিচুগুলি জৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহে অর্থাৎ ১৫ মে থেকে পাকতে শুরু করে। কিন্তু এবার প্রখর রোদ ও তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গত বছরের তুলনায় এবার লিচু পাকা প্রায় ৭ থেকে ১০ দিন বেড়েছে। কৃষকরা জানান, লিচু আগে পাকতে শুরু করলেও এর বীজ তেমন জন্মায়নি। তাই ফলন ভালো হলেও ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত তারা।

জানা গেছে, দিনাজপুরের হিলি, খানসামা, বীরোলসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার বাজারে এরই মধ্যে লিচু আসতে শুরু করেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর দিনাজপুরে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। জেলায় সাধারণত পাঁচ জাতের লিচু উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে মাদ্রাসি লিচু চাষ হয় ৩০ শতাংশ। একইভাবে বোম্বাই ৩৯ শতাংশ, বেদানা ৫ শতাংশ, চায়না ৩২ শতাংশ এবং কাঁঠাল জাতের ১ শতাংশ। তবে প্রথম দিকের লিচু মাদ্রাজী। এর পরে, বোম্বে, বেদানা এবং চায়না থ্রি ক্রমানুসারে পাকা হবে। ফলটি রসালো হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বলছেন, বোম্বাই ও বেদানা জাতের লিচু এ বছর একসঙ্গে বাজারে আসবে।

দিনাজপুর ফল চাষি সমবায় সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এবার তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে মাদ্রাসি লিচু বাজারে আসতে শুরু করেছে ৯ মে থেকে। বোম্বাই ও বেদানা ২২ বা ২৪ মে এবং চায়না থ্রি ও অন্যান্য জাতের লিচু বাজারে আসা শুরু করবে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে।

বাগানির মাসিমপুর এলাকার মো. সালাহউদ্দিন জানান, তিনি প্রায় তিনটি বাগানের চুক্তি করেছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। কিছু কিছু লিচু রোদের কারণে ঝরে পড়লেও ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের তুলনায় এ বছর লিচুর ভালো দাম পাব।

দিনাজপুর ফল চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি রাস্তম আলী জানান, পিক মৌসুমে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই কোটি টাকার বেশি লিচু বিক্রি হয়। রোদ ও গরমের কারণে চলতি বছর ১০ দিন আগেই বাজারে লিচুর আমদানি এসেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে লিচুর ফলন কম। ফলে এবার লিচুর দাম বেশি হবে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুজ্জামান জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা লিচুর ভালো পরিচর্যা করেছেন। আশা করছি কৃষকরা উপকৃত হবেন।

এদিকে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে বোম্বাই লিচু বাজারে আসতে আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে। তবে লিচুর ফলন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ঈশ্বরদীর অধিকাংশ বাগান মালিক। গত মঙ্গলবার ঈশ্বরদীর লিচু উৎপাদনকারী গ্রাম জয়নগর, সাহাপুর, মানিকনগর ও বারইছড়া সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ গাছেই লিচু নেই। লিচু আক্রান্ত গাছের ফলনও কম।

রূপপুর গ্রামের লিচু চাষি জালাল উদ্দিন জানান, এ বছর আমার বাগানের অর্ধেক গাছে লিচু ধরেনি। আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস আমরা শুনছি সে অনুযায়ী লিচু পাকার সময় দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই যে লিচু ধরেছি তা রাখতে পারব কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছি।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য বলছে, গত চার বছরের মধ্যে লিচুর ফলন সবচেয়ে কম। ঈশ্বরদীতে প্রতি বিঘায় ১৮ থেকে ২২টি লিচু গাছ হয়। সে হিসাবে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচু গাছের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, দেশে সবচেয়ে বেশি লিচু উৎপাদন হয় ঈশ্বরদীতে।

এদিকে নাটোরের গুরুদাসপুর প্রতিনিধি জানান, উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় লিচুর খামার নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বেরগঙ্গারামপুর কানুমোল্লার বটতলা। গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় এখানে লিচু গাছের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ বছর শত শত কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *