মহাবিপদ হয়ে আসছে’মোকা’

0

ক্রমবর্ধমান গতি, শক্তি নিয়ে. বিপজ্জনক হয়ে উঠছে ঘূর্ণিঝড় মওকা। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে আসলেও খুব শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। গতিপথের সামান্য পরিবর্তনে ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বেগে বাতাসের গতিবেগ বাংলাদেশের উপকূলের ৭৯৫ কিলোমিটারের মধ্যে ঢেকে নিচ্ছে। এর প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। কক্সবাজারে ভারী বর্ষণ হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ দেখে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর জরুরি সংকেত এবং মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ মে অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক দুর্যোগ সতর্কীকরণ সংস্থা গ্লোবাল ডিজাস্টার অ্যালার্ট অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন সিস্টেম (জিডিএসিএস) মোকার জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। সংস্থাটি মোকাকে এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দুর্যোগ হিসাবে নাম দিয়েছে।

গতকাল রাত সাড়ে ১০টা থেকে সদরঘাট থেকে সব ধরনের লঞ্চ ও নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মহেশখালীর কাছে সাগরে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে শনিবার চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হবে। কিছু পাওয়ার প্ল্যান্ট আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মওকার প্রভাবে আজ শনিবার সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজারসহ দেশের অন্যান্য স্থানে বৃষ্টি হবে। হারিকেন স্ট্রাইকের সময় ঝড়ের ঢেউ ঘটতে পারে। রোববার সন্ধ্যার মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করা যাবে। ঘূর্ণিঝড় ঘনিয়ে আসায় উপকূলে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষ করে দুর্গামচর, টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নাগালের মধ্যে থাকলেও সম্পদের মায়া তাদের তাড়া করছে। ঝড়ের কারণে ঝড়ে পড়তে পারে মৌসুমি ফল, বন্যার কারণে ধানক্ষেত পড়ে যেতে পারে। তবে এসব ঝুঁকি মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে উপকূলে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। টেকনাফের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্টমার্টিন থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সেখানে ৩৬টি ভবন ও স্থাপনাকে সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ঘোষণা করেছে। দ্বীপে ৭ দিনের খাবার সরবরাহের পরামর্শ দেওয়া হয়। দেশের অন্যান্য স্থানেও চলছে প্রচারণা। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়টি সামান্য বাঁক নিয়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে গতিপথ পরিবর্তন করে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে। আগামী রোববার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কিয়াউকপিউয়ের মধ্যবর্তী এলাকা অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড় মওকা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬০ কিলোমিটার, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৯০ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। তখন ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের কাছে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ১৪০ কিমি/ঘন্টা যা দমকা ও দমকা হাওয়ায় বেড়ে ১৬০ কিমি/ঘণ্টা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ১১ কিলোমিটার বেগে অগ্রসর হচ্ছিল। মোকা তার বর্তমান অবস্থান থেকে উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গিয়ে আরও ঘনীভূত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আসার সাথে সাথে ভারী বৃষ্টিপাত করবে। এছাড়াও, উপকূলীয় নিচু এলাকাগুলি স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ২.৭ মিটার বেশি উচ্চ জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং এর আশেপাশের দ্বীপ ও চরগুলো ৮ম মেগা দুর্যোগ সংকেতের আওতায় থাকবে।

মোকার বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা, যা দমকা হাওয়ার আকারে ১৭৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় বাড়তে পারে, ইন্ডিয়া মেটিওরোলজিক্যাল অফিস বুলেটিনে বলা হয়েছে। তবে টাইফুন সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আঘাতের সময় মোকার বাতাসের গতিবেগ ২০০ কিলোমিটারের বেশি হতে পারে।

যদি বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিমি হয় তবে এটি একটি ঘূর্ণিঝড়। ৮৮ থেকে ১১৭ পর্যন্ত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, ১১৭ থেকে ২২০ কিমি/ঘন্টা বেগে বাতাসের গতিবেগ ২২০ কিমি/ঘন্টা অতিক্রম করলে তাকে সুপার সাইক্লোন এবং সুপার সাইক্লোন বলা হয়।

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ শামীম হাসান ভূঁইয়া বলেন, “মওকা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে কক্সবাজার উপকূল ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। দ্বীপের বড় অংশে জোয়ার-ভাটা রয়েছে। ঝড়ের সময় ভূমিধসের ঝুঁকিও রয়েছে। বৃষ্টির আগে এবং পরে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, “যে মডেলগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র টেকনাফের দক্ষিণ দিকে চলে যাবে। এটি আমাদের সীমানার বাইরে। তবে কেন্দ্রেরও পরিবর্তন হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *