আন্দোলন, সংলাপ ও ভোট সব প্রস্তুতি বিএনপিতে
নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত আন্দোলনসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের জন্যও প্রস্তুত থাকবে দলটি। তবে সংলাপের শর্ত হবে- নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আবারও একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এ প্রস্তুতির কথা জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার মোকাবিলায় পাল্টা কৌশল নেবে বিএনপি। তবে চলমান শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি যাতে সহিংস না হয় সেজন্য সতর্কতা বজায় রাখা হবে। আন্দোলনের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠছেন সম্ভাব্য দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও জোর লবিং শুরু হয়েছে। এ ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পেতে পর্দার আড়ালে তদবির চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
তবে শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপিতে সংকট রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মাঠের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত না থাকায় আগামীতে শীর্ষ নেতৃত্বের সংকট আরও প্রকট হতে পারে। বিগত নির্বাচনের আগেও দেশি-বিদেশিদের সামনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি দলটি। বিষয়টি পরিষ্কার হলে মানুষের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। বিষয়টি নিয়ে দল ও সমমনা দলগুলো কানাঘুষা করলেও কৌশলগত কারণে বিএনপি আগাম ঘোষণা দিতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ অবস্থায় আন্দোলন ও নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দলের মধ্যে ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলছে। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। জনগণ এরই মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমেছে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় জনরোষের মুখে নিস্তার থাকবে না। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে পরপর দুটি নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটের অধিকার হারিয়েছে। সে সুযোগ এবার পাওয়া যাবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। ইতিমধ্যে আন্দোলন শুরু হয়েছে। জনগণ জেগে উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজপথে আন্দোলন করে সংকটের স্থায়ী কোনো সমাধান হবে না। এতে সংঘর্ষ ও সহিংসতা হতে পারে। যা সবার জন্য ক্ষতিকর হবে। সংলাপই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের একমাত্র উপায়। ক্ষমতাসীন দলেরও এটা বোঝা উচিত। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাজনৈতিক সমঝোতা হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকার সংবিধানে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করে। পরের কয়েকটি নির্বাচন মেনে নেওয়া হয়। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য সেই ব্যবস্থা বহাল থাকলে আজ এই রাজনৈতিক সংকট ঘটত না।
চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে: নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপিসহ ৫৪টি সমমনা দল ও সংগঠন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দলকে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বর্তমানে সারাদেশে সাবেক ও বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। আন্দোলনের কর্মসূচি পালন ও অংশগ্রহণে ব্যর্থ ইউনিট ও দায়িত্বশীল নেতাদের সতর্ক করা হচ্ছে। ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি সফল করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। জনঅংশগ্রহণ বাড়াতে চলছে হাউজ মিটিং, উঠান বৈঠক ও মতবিনিময়। আন্দোলনকে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে বিভাগীয় গণসভা ও সভা শেষে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে দ্বিতীয় ধাপে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। জেলা সদর ও বিভাগীয় শহরে পদযাত্রা কর্মসূচির পর আজ আবারও মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে দলটি। কর্মসূচিতে বিএনপি ও সমমনা দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও অংশ নেবেন। কর্মসূচি থেকে পরবর্তী কর্মসূচিও দেবেন তারা।