আগামীকাল থেকে সম্মেলন শুরু হচ্ছে।নির্বাচনের আগে কপালে ভাঁজ ডিসিদের

0

আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ৬৪ জেলা প্রশাসকের ডিসি সম্মেলন। নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো লিখিত এজেন্ডা না থাকলেও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে আসছে। ডিসিরা নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত ডিসিরা। সম্মেলন শেষ হবে বৃহস্পতিবার।

অন্যথায় উল্লেখ না থাকলে, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এটাই শেষ ডিসি সম্মেলন। বর্তমানে প্রশাসনের ২২তম ব্যাচের ২৬ জন ডিসি, ২৪তম ব্যাচের ২৮ জন এবং ২৫তম ব্যাচের ১০ জন ডিসি মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে ২২ ব্যাচের অধিকাংশ ডিসিকে তাদের মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী নির্বাচনের আগে অপসারণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে ২৪ ও ২৫ ব্যাচের ডিসি নির্বাচনকালীন মাঠে থাকবেন। এর সাথে আন্ডার সেক্রেটারি থাকা ২৭ ব্যাচের একটি অংশকেও ডিসি পদে পদায়ন করা হবে। প্রশাসন-সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবছর ডিসি হিসেবে এক ব্যাচের কর্মকর্তাদের ফিটলিস্ট তৈরি করা হয়। সেই হিসাবে, ২৫ ব্যাচে ডিসি নিয়োগ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। এই ব্যাচ থেকে কমপক্ষে ৩০-৩৫ জন ডিসি পদে নিয়োগ পেতে পারেন। স্বাভাবিক নিয়মেই এমনটা হওয়ার কথা। এর বাইরে বিশেষ কারণে নির্বাচনের আগে আরও পরিবর্তন হলে অন্য কথা।

রোববার ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা নির্বাচনের নিয়ে প্রশ্ন করেন। জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, দেশের সব নির্বাচনই প্রশাসনের সহায়তায় হয়। আগামী নির্বাচনেও একই অবস্থা হবে। নির্বাচনে সহযোগিতা করার ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা রয়েছে প্রশাসনের। প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে সহযোগিতা করবে।

ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে রোববার থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন বিভিন্ন জেলার ডিসিরা। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দেশের অন্তত আট জেলার ডিসির সঙ্গে কথা বলেছে ।তাদের প্রত্যাশা জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন ডিসি আসন্ন নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরেন। তবে তারা কেউই প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডিসি হতে প্রার্থীদের মধ্যে যে ধরনের লবিং চলছে, তা অনেকটা প্রশমিত হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে এমন চিন্তা থেকেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উত্তরবঙ্গের একটি জেলার ডিসি বলেন, ধীরে ধীরে আমাদের পদে (ডিসি) অনেকটাই রাজনৈতিক রং হচ্ছে। কে কোন সরকারের আমলে ডিসি ছিলেন এখন গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এগুলি বিশেষ করে প্রচার এবং গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়। তাই ডিসি হওয়ার আনন্দে দুশ্চিন্তার পাল্টা। আরেক ডিসি বলেন, সাধারণ সময়ে ডিসির দায়িত্ব পালন আর নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন এক কথা নয়। নির্বাচনের সময় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। এ সময় নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করলে সরকার বিরোধী দলের শক্তি মনে করে, সরকার দলীয়ভাবে অবস্থান নিলেও বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়। এটি উভয়ই একটি সংকট পরিস্থিতি। যাইহোক, ২২ ব্যাচের ডিসি তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। কারণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাদের মাঠপর্যায়ের কাজ শেষ হতে যাচ্ছে।

ডিসিদের উদ্বেগের বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, মাঠ প্রশাসনসহ সব জায়গায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করেন। তাই বিশেষ কোনো সময়ের জন্য তাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, দল যখন সরকার গঠন করে তখন সেই দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করে। এর মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো দলের নয়।

ডিসি সম্মেলন সাধারণত বছরের মাঝামাঝি অনুষ্ঠিত হয়। করোনার কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে সম্মেলন হয়নি। গত বছরের জানুয়ারিতে সম্মেলন হয়েছিল। বছরের শুরুতেই ডিসি সম্মেলন হচ্ছে। এখন থেকে শীতকালেও সম্মেলন আয়োজনের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এদিকে ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয় থেকে ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। গতবার করোনার কারণে কার্যত সম্মেলন উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান। সম্মেলনে মোট ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অংশ নেবে। এবারের সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি (২৩) প্রস্তাব এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ও ই-গভর্নেন্স, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *