ঘরের টাকা আবার ব্যাংকে যাচ্ছে

0

হঠাৎ করেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিজের কাছে রাখার প্রবণতা বেড়েছে। এই প্রবণতা ব্যাংকগুলির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। ঘরে রাখা টাকা ফেরত আসতে শুরু করেছে ব্যাংকে। এরই মধ্যে প্রচলিত নগদ নোটের পরিমাণ ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। গত ২২ ডিসেম্বর যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মানুষের কাছে নগদ টাকা বৃদ্ধি বা কমার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ সরবরাহে বোঝা যায়। মুদ্রিত নগদ অর্থের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় জমা রয়েছে। ব্যাঙ্কগুলির দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে তাদের ভল্টে ১৩ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। বাকি টাকা জনগণের হাতে। সব মিলিয়ে ব্যাঙ্ক ও সেভিংস অ্যাকাউন্টে রয়েছে ২০ লক্ষ কোটি টাকা। কিছু অর্থ বীমা, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা হয়। এসব সঞ্চয়ের বিপরীতে বর্তমানে ছাপা টাকার পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। গত অক্টোবর শেষে যা ছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। আজকাল ব্যবসাসহ বেশিরভাগ লেনদেন অনলাইনে হয়ে থাকে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই দৈনন্দিন খরচ, ব্যবসায়িক প্রয়োজনসহ নানা কারণে কিছু পরিমাণ নগদে রাখেন। মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে সঞ্চয় হ্রাস পায় এবং হাতে টাকার পরিমাণ বাড়ে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি এবার হঠাৎ করেই ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নগদ অর্থ রাখার প্রবণতা বাড়ছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, সাধারণত ১০ থেকে ১২ শতাংশ সঞ্চয় নগদে মানুষের হাতে থাকে। তবে গত সেপ্টেম্বরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভুল তথ্য এবং পরে ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক নিয়ে আলোচনার পর বিভিন্ন ব্যাংক থেকে আমানত উত্তোলনের চাপ বেড়ে যায়। এরপর ব্যাংকগুলোকে ফোন করে বলা হয় কেউ যেন টাকা নিতে না আসে। কোনো ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়নি। এখন ব্যাংকে টাকা ফিরতে শুরু করেছে। উত্তোলনের চেয়ে আমানত বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর শেষে প্রচলনের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। ১৭ নভেম্বর তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। ১ ডিসেম্বর তা দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। গত ৮ ডিসেম্বর এক সপ্তাহের মধ্যে প্রচলন বেড়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। ১৫ ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। এরপর গতি কিছুটা কমে ২২ ডিসেম্বর ২৯৪ হাজার ৭৪০ কোটিতে দাঁড়ায়। তারপর থেকে আবার কমতে শুরু করে। ২৯ ডিসেম্বর প্রচলনে নোটের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯০ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। পরবর্তী গণনা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে তা ২৯০ হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে বলে জানা গেছে। তবে গত বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রচলন ছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। আর কোরবানি ঈদের আগের কার্যদিবসে গত ৭ জুলাই বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। এরপর থেকে আবার কমতে থাকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে ৩ হাজার কোটি টাকা ছাপানো অর্থ পুড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। পুরানো, নোংরা বা অতিরিক্ত মার্কিংয়ের কারণে ব্যাংকগুলি নন-ইস্যু বা অপ্রচলিত নোট হিসাবে আরও ১৫,০০০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। এই নোটগুলির মধ্যে কিছু বাছাই করা হয় এবং প্রচলনে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে গত ডিসেম্বরে নগদ টাকার চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাছাই না করেই পুরনো ও কলঙ্কিত নোট বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সময়ে অনেক নতুন নোটও ইস্যু করা হয়েছিল। এখন আবার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এর একটি কারণ হল আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের বাইরে টাকা রাখা নিরাপদ নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *