স্যাকরাইন উৎসব।আকাশ জুড়ে ঘুড়ির মেলা
আকাশ জুড়ে উড়ছে রঙিন ঘুড়ি। তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ বাড়ির ছাদে। এভাবে বিকেলের নরম আলো নেমে এলে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানোর খেলা। শিশুদের আনন্দের সীমা নেই! এই আনন্দ সব বয়সের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ঘুড়ি কাটাকাটি খেলায় হেরে যাওয়ার পর কারো মনে কষ্ট জমে। কিন্তু এই ব্যথা বেশিদিন থাকে না। উৎসবের মেজাজ যন্ত্রণাকে উড়িয়ে দেয়। গতকাল শনিবার পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্যাকরাইন উৎসবে এসব দৃশ্য দেখা গেছে।
এদিন পুরান ঢাকার আকাশ ছিল ঘুড়ির দখলে। অসংখ্য ঘুড়ি যেন পাখির ঝাঁক। সকালে গানের মাধ্যমে উৎসব শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আনন্দ। আকাশে ঘুড়ির সংখ্যাও বেড়েছে। এবার স্যাকরাইনের স্লোগান ছিল ‘ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা’। বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকাবাসী সংগঠনের আয়োজনে ঘুড়ি ওড়ায়। বকশীবাজারের ঢাকা টাওয়ারেও একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন। অনুষ্ঠানে কাওয়ালি গান ও নৃত্য পরিবেশনের পাশাপাশি আয়োজন করা হয় পিঠা-পুলির।
ধারণা করা হয় যে ১৭৪০ সাল থেকে প্রতি বছর স্যাকারিন উৎসব পালিত হয়ে আসছে। পুরান ঢাকার সকল বাসিন্দা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। শনিবার দিনভর বনশাল, শাঁখারিবাজার, রায়সাহেব বাজার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, বাংলাবাজার, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, ধোলাইখাল, বকশীবাজার, হাজারীবাগ এলাকায় মানুষ ঘুড়ি ওড়ায়। সেই সঙ্গে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার ও পিঠা-পুলির আয়োজন করা হয়। এই ঘুড়ি উড়ানো উৎসবে অংশ নেয় পঙ্খীরাজ চোখদার বোয়াদার, গায়েল, নখপান্ডার, নোমাইলদার, বলদার, পেটকাদার, মাছরাঙা, আইস, গরুশিং, রাগগুদ্দি, প্লাস্টিকের ঘুড়ি ও অন্যান্য ঘুড়ি। ছোট-বড় সবাই শখের মতো ঘুড়ি ওড়ায়।
সাকরাইনকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার অলিগলিতে অবস্থিত ঘুড়ির দোকান। দোকানগুলোতে ২০ টাকা থেকে ৫০০-৬০০ টাকা দামের ঘুড়ি বিক্রি হয়েছে। এবার ভালো বিক্রি হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। শাঁখারীবাজারের ঘুড়ি বিক্রেতা সুশান্ত কুমার সাহা বলেন, করোনার কারণে দুই বছর ধরে উৎসবের মেজাজ একটু ক্ষীণ ছিল।