রপ্তানিতে কিছুটা স্বস্তি

0

নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ২০২২ সালে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। এ বছর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় রেকর্ড করা হয়েছে। বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানিকারক হিসেবে দেশটি তার মর্যাদা ফিরে পেয়েছে। প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত বা নতুন বাজার থেকেও ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।

যুদ্ধ এবং জ্বালানি বাজারের অস্থিরতার বৈশ্বিক বাস্তবতা এবং প্রধান অর্থনীতিতে ৪০ বছরের রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে এই বছর দেশের রপ্তানি বাণিজ্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বছরের কোনো কোনো মাসে সেই বাস্তবতা ফুটে ওঠে রপ্তানির চিত্রে। তবে বছর শেষে বাস্তবের বিপরীতে পণ্য রপ্তানি আয় এসেছে। দেশের ইতিহাসে একক মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছে নভেম্বরে। এ মাসে ৫০৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছিল ৪৯১ মিলিয়ন ডলার।

তবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) নভেম্বরের তথ্যের সঙ্গে রপ্তানিকারকরা একমত নন। কিছু রপ্তানিকারক বলেছেন, ইপিবির পরিসংখ্যান যতটা দেখা যাচ্ছে, ততটা রপ্তানি করেননি তারা।

গত বছরের একই মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে ৪১ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় নিয়ে এ বছরের রপ্তানি যাত্রা শুরু হয়েছে। মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪৮৫ মিলিয়ন ডলারের। ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি কিছুটা কমে ৪.২৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

প্রবৃদ্ধিও জানুয়ারির তুলনায় কিছুটা কম, ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে মার্চে রপ্তানি সামান্য বেড়ে ৪.৭৬ বিলিয়ন হয়েছে। এপ্রিলে রপ্তানি হয়েছে ৪.৭৪ বিলিয়ন ডলার। মে মাসে বৃদ্ধির প্রবণতা কমতে শুরু করে। মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৮৩ মিলিয়ন ডলারের। রপ্তানিও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২ শতাংশ কমেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই মাসগুলোতে রপ্তানি প্রবাহ কমে গেছে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা।

জুনে রপ্তানি সামান্য বেড়ে ৪.৯১ বিলিয়ন হয়েছে। জুলাই মাসেই রপ্তানি প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার কমে ৩ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আগস্টে তা আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬১ মিলিয়ন ডলারে। তবে সেপ্টেম্বরে বড় ধাক্কা খেয়েছে রপ্তানি খাতে। টানা ১৩ মাস পর, সেই মাসে এক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো রপ্তানি কমেছে। এ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৯১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশ। অক্টোবরেও নেতিবাচক প্রবণতা অব্যাহত ছিল। রপ্তানি ৪৩৬ মিলিয়ন ডলারের সামান্য কম। মাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ৮ শতাংশ।

আগস্টে ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পর, রপ্তানি পরের মাসে তীব্রভাবে কমেছে। সেপ্টেম্বর থেকে রপ্তানি কমে যাওয়ার জন্য দেশে জ্বালানি সংকটকে দায়ী করা হচ্ছে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত। সে হিসেবে সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমেছে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ। রপ্তানিকারকরা বলছেন, গ্যাসের সংকট, বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং সময়সূচি বিঘ্নিত হওয়ার সময় জেনারেটরদের জ্বালানি পোড়াতে হয়েছে। ওই সময় হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। এছাড়া গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। পণ্যের দাম এবং উৎপাদন খরচের মধ্যে বড় ব্যবধানের কারণে অনেক উদ্যোক্তা রপ্তানি আদেশ ফিরিয়ে দিয়েছেন। বিশ্ববাজারে চাহিদাও ছিল তুলনামূলক কম। কিন্তু হঠাৎ করেই নভেম্বরে দেশের রপ্তানি ইতিহাসে রেকর্ড ৫০৯ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে। ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি। তবে বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় ২২ ডিসেম্বর পোশাক রপ্তানি কমেছে ২ শতাংশের বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *