আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস আজ।জনশক্তিতে শক্তি, রেমিটেন্সে দুর্বল

0

করোনার প্রভাবে এ বছর জনশক্তি রপ্তানি রেকর্ড ভেঙেছে। অন্তত ১০ লাখ ২৯ হাজার বাংলাদেশি চাকরির জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ১৭ হাজার। তবে জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও রেমিটেন্স কমছে। দুই বছরে ১.৬ মিলিয়ন নতুন কর্মীর বিদেশ যাওয়ার বিপরীতে, ২০২০ সালে রেমিট্যান্স ২১.৭৫ বিলিয়ন ডলার এবং পরের বছর ২২ বিলিয়ন ডলারে এসেছিল। তবে এ বছর ১০ লাখের বেশি জনশক্তি রপ্তানির বিপরীতে রেমিটেন্স এসেছে ১৯ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রবাসী অ্যাক্টিভিস্ট, বিশেষজ্ঞ এবং সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, হুন্ডি রেমিটেন্স খাচ্ছে যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে পুষ্ট করে। ডলারের ভারসাম্যহীনতা, আইনি মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর খরচ ও ঝুঁকি এবং শ্রমিকদের নিম্ন আয়ের কারণে রেমিটেন্স কমে যাচ্ছে। ডলার সংকট বাড়ছে আর রিজার্ভ কমছে। এ কারণে অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।

শ্রমিকরা প্রকাশ্যে বলছেন, ডলারের নিয়ন্ত্রিত হারের কারণে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা পেলেও দেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে তারা পান কম, হুন্ডিতে বেশি টাকা। কোনো ঝামেলা ছাড়াই বাসায় পৌঁছান। ফলে দেশে টাকা এলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হয় না। এর বদলে হুন্ডির জন্য পাচার হচ্ছে ডলার।

কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স হ্রাসের বিপরীত পরিস্থিতিতে ‘ভালো থাকি ভালো দেশ, বৈধভাবে প্রবাসী আয়-গরব বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে রোববার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। বৈধ রেমিট্যান্সের ওপর সরকারের জোর দেওয়া সত্ত্বেও পরিসংখ্যান বলছে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে।

রেকর্ড কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং রেমিটেন্সের নিম্নমুখী প্রবণতার বিপরীত চিত্রের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ বাংলাদেশের বৃহত্তম শ্রমবাজার সৌদি আরব। এ বছর রেকর্ড পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৫০৭ জন শ্রমিক বিদেশ গেছেন। গত বছর গিয়েছিলেন ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২২৭ জন। দুই বছরে ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৩৪ জন নতুন বাংলাদেশি কর্মসংস্থান পেলেও রেমিট্যান্স ক্রমাগত কমছে।

বিএমইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৫২ লাখ ৪৪ হাজার বাংলাদেশি সৌদি গিয়েছিলেন। সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, ২০২০ সালে ২৬ মিলিয়ন বাংলাদেশি সৌদি আরবে ছিলেন। বর্তমানে এই সংখ্যা ৩০ মিলিয়নের কম হবে না।

শ্রমিক বাড়লেও কেন রেমিটেন্স কমছে তার উত্তর পাওয়া গেছে প্রবাসীদের কাছ থেকে। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের আবদুস সালাম মাঝি ২৮ বছর ধরে সৌদি আরবের মদিনায় বসবাস করছেন। তিনি বলেন, বৈধভাবে পাঠানো হলে দেশে ১ হাজার রিয়ালের বিপরীতে ২৭ হাজার টাকা পাওয়া যায়। ৬৭৫ টাকা ইনসেনটিভও পাওয়া যায়। তবে টাকা পাঠাতে খরচ হয় প্রায় ৪ শতাংশ অর্থাৎ ১ হাজার ৮০ টাকা। ফলে ২৬ হাজার টাকা পাওয়া যাচ্ছে।

সালাম মাঝি বলেন, রেমিট্যান্স জমা দিতে সৌদিতে ব্যাংকে যেতে হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের জটিলতাও রয়েছে। টাকা তুলতে হলে আবার দেশের ব্যাংকে যেতে হবে। আর হুন্ডি পাঠালে ১০০০ রিয়ালের বিপরীতে ঘরে বসেই পাওয়া যাবে ২৮ থেকে ২৯ হাজার টাকা। ফোন করে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের নম্বর দিলেই দেশে মোবাইল ফোন বা বাড়িতে টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বৈধ রেমিটেন্স বাড়াতে প্রণোদনা বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিলেও সরকার তা গ্রহণ করেনি। দুই থেকে আড়াই শতাংশ বেড়েছে। গত ৭ ডিসেম্বর সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আবারও প্রণোদনা বাড়ানোর সুপারিশ করে। বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ডলার ব্যাংকের সঙ্গে হুন্ডির দামের বড় পার্থক্য তৈরি হয়েছে। এতে আইনি মাধ্যমে অর্থের প্রবাহ কমে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ ডিসেম্বর আন্তঃব্যাংক ডলারের বিনিময় হার ছিল ১০২ থেকে ১০৩ টাকা ২০ পয়সা। কিন্তু বাজারে ডলারের দাম বেশি। আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর ৯০ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে তা উঠে যায় ১১৯ টাকায়। অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন কর্মসূচির (ওকেএপি) নির্বাহী পরিচালক শাকিরুল ইসলাম  বলেন, ডলারের দামের কারসাজির কারণে বৈধভাবে টাকা আসছে না। বিদেশে কষ্টার্জিত মজুরি হুন্ডিতে পাঠিয়ে দেশে বেশি আয় হয়। এটা শ্রমিকের দোষ নয়। তাদের উচিত নীতিগত সহায়তা দেওয়া, বৈধ মাধ্যমে অর্থ পাঠানো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *