ঢাবি ক্যাম্পাসে গাড়ির ধাক্কায় এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে রুবিনা আক্তার নামে এক নারীকে ধাক্কা দিয়ে দেড় কিলোমিটার টেনে নিয়ে যান প্রাইভেটকারের চালক। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু বরণ করেন।ওই চালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক। ক্যাম্পাসের ভেতরে এমন মর্মান্তিক ঘটনায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ইউনিয়ন স্বতন্ত্রভাবে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ মিছিল ও মশাল মিছিল করেছে।
উপাচার্য প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামানের বাসার সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন এর আগে টিএসসিসহ বিভিন্ন এলাকায় মশাল মিছিল করেছে বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাবি শাখা। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থানরত নারী শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সবাই সংহতি প্রকাশ করেন।
সাধারন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে শামসুন নাহার সংসদের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, শিক্ষার্থী মনিরা শারমিন, আরমানুল হক, আরিফুল ইসলাম, আশরেফা খাতুন, দূতি অরণ্য চৌধুরী, সাকিবুর রনি, আবদুল্লাহ আল নোমান, গোলাম আজম, মোহাম্মদ রমিম খান, মো. আদনান আজিজ চৌধুরী, রাজীব। কান্তি দাস, আহমেদুল্লাহ সিয়াম উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
আফরোজ ইমি বলেন, ক্যাম্পাসে যে লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে তা কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা, চুরি, ছিনতাই, নারী হয়রানির ঘটনা ঘটছে। এটা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্র নয়। এই নিরাপত্তাহীনতায় দিনের পর দিন চলতে পারে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত যান নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু প্রশাসন কখনোই এ বিষয়ে কোনো নজর দেয়নি। তারা আমাদের শিক্ষার জন্য সুস্থ পরিবেশ দিতে পারে না। অন্যদিকে তারা আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, শিক্ষক হওয়ার পর বাংলো নিয়ে রাজনীতি করতে পারে। আমরা এ ধরনের প্রশাসন ও ভিসি ও শিক্ষক চাই না।
এ সময় তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের রাস্তাগুলো সিটি করপোরেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অধীনে আনা, ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রবেশপথে চেকপোস্ট স্থাপন এবং ক্যাম্পাসে অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও চলাচলের সীমা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অভ্যন্তরীণ যানবাহনের জন্য।
এ ছাড়া সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজু ভাস্করে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ছাত্র অধিকার পরিষদ। এরপর শেষে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন তারা।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। ট্রাফিক জ্যাম, পাগল আর ভবঘুরেদের নিয়ে কি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা সম্ভব? আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করব- প্রশাসন যেন একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর ক্যাম্পাস দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়।’
এদিকে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মশাল মিছিল বের করা হয়। এ সময় ক্যাম্পাসে প্রাইভেট যানবাহন চলাচল বন্ধ ও গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের দাবি জানায় সংগঠনটি।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, আমাদের ক্যাম্পাস চারিদিকে উন্মুক্ত। ফলে যে কেউ অবাধে প্রবেশ করতে পারে। সুনির্দিষ্ট কোনো কাজ না থাকলে কেউ যেন ক্যাম্পাসে না আসে। আমরা সকলের সহযোগিতা চাই।
আখতারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়েছে। ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে আমরা তা নিয়ে ভাবছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে তা যৌক্তিক, তাদের দাবির বিষয়ে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। গাড়ি চাপায় একজন নারীর মৃত্যু অমানবিক ও মর্মান্তিক।
এর আগে সন্ধ্যায় রমনা জোনের ডিসি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, “খুবই অমানবিক ও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। চালক সুস্থ হয়ে উঠলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করব কেন তিনি এমন করলেন। তিনি এখনও চিকিৎসাধীন। আমরা এখনও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। তার একটি ফোন নম্বর পেয়েছি স্ত্রীর কিন্তু কল পড়লেও কল রিসিভ করেনি, এরপর মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।এ ঘটনায় মামলা করা হবে।