আবারও বাড়ছে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম!
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ছে? এমন প্রশ্ন উঠেছে গ্রাহকদের মনে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এখতিয়ার খর্ব করে সরাসরি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা নিতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য বিইআরসি আইনের সংশোধনী মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে অধ্যাদেশ জারি করে যত দ্রুত সম্ভব এ সংশোধনী কার্যকর করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আইএমএফের শর্ত বা সুপারিশ অনুযায়ী স্বল্প মেয়াদে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। সে জন্য সরকার আইন সংশোধনে তড়িঘড়ি করছে। সংসদে এ আইন পাস হতে কিছুটা সময় লাগবে। এ জন্য রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করে তা বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। সূত্র জানায়, আগামী ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফ ঋণের বহুল কাঙ্ক্ষিত প্রথম কিস্তি পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ। এর আগে ঋণ প্রস্তাবটি আইএমএফের বোর্ড সভায় অনুমোদন করতে হবে। তার আগে আইএমএফের শর্ত মেনে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণে অনেক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও অপচয় শনাক্ত করা যেত। নির্বাহী আদেশ দ্বারা মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই সব অনুসরণ করা হবে না। ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আরো স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারে। তাদের মতে, বিইআরসির ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করায় বিভিন্ন বিষয়ে শুনানি ও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কারণ সরকার বিধিমালা সংশোধন করে বিশেষ বিইআরসির মাধ্যমে কম সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সমন্বয় করতে পারত। আইন সংশোধন করে ক্ষমতা কমানোর দরকার ছিল না।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বিইআরসির মাধ্যমে দাম সমন্বয় করতে অন্তত তিন মাস সময় লাগে। কমিশন যে নথিপত্র চায় তা প্রস্তুত ও নিরীক্ষা করতেও সময় লাগে। কিন্তু বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম দ্রুত ওঠানামা করে। বিশেষ সময়ে চাইলেও দ্রুত দাম সমন্বয় করা সম্ভব হয় না। তাই আইন সংশোধন করে সরকার কিছু ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে দিয়েছে।
গত সোমবার মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপিত আইনের সংশোধনীর সারসংক্ষেপে জ্বালানি বিভাগ জানায়, বর্তমানে সংসদ অধিবেশন না থাকলেও জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার বিশেষ পরিস্থিতি রয়েছে। তাই বর্তমান আইনে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের দামে সরকারের ক্ষমতা সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিধানের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করা যেতে পারে।
সূত্র জানায়, চলতি জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশন শেষ হয়েছে ৬ নভেম্বর। ২১তম অধিবেশন শুরু হতে পারে জানুয়ারির শুরুতে। ফলে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বিইআরসি আইনের সংশোধনী আগামী সংসদ অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর তা যাবে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে। সব মিলিয়ে প্রক্রিয়াটির মধ্য দিয়ে যেতে অনেক সময় লাগবে। তবে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে শিগগিরই আইনটি সংশোধন করা যেতে পারে। এর মানে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম শিগগিরই বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিইআরসি ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম গত জুনে ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২২.৭৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯১ পয়সা করেছে। গত ২১ নভেম্বর প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের পাইকারি দাম (ঘণ্টা কিলোওয়াট) ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়। বর্তমানে ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলো ভোক্তা পর্যায়ে ২০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটার ৩৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৬ টাকা করা হয়। গত ২৯ আগস্ট দাম কমানো হয় লিটারপ্রতি ৫ টাকা।
পেট্রোবাংলার দাবি, তারা এখনও লোকসানে গ্যাস বিক্রি করছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলছে, অকটেন ছাড়া অন্য তেল বিক্রিতে এখনো লোকসান হচ্ছে; যদিও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেক কমেছে। বিশ্ববাজারে এখন প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৭৫ থেকে ৮০ ডলার।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি সত্ত্বেও ভোক্তা পর্যায়ে এটি ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করা হয়। সম্প্রতি আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার সময় আবারও আলোচনায় আসে ভর্তুকি প্রসঙ্গ। আইএমএফ চায় সরকার ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসুক। সরকারও খরচ কমাতে ভর্তুকি কমাতে চায়। সম্প্রতি আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরের পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের বাজারদর অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এর ফলে বিইআরসি আইন সংশোধন করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্টেকহোল্ডাররা মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি বিতরণের আগে একবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়তে পারে।