প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও ছাপা হচ্ছে ৩৫ কোটি বই
প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও ছাপা হচ্ছে ৩৫ কোটি বই
আর এক মাস পর শুরু হবে নতুন বছর। শিক্ষার্থীরা বছরের শুরুতেই নতুন বই পাবে। বই উৎসব হবে। এ কারণে ছাপাখানাগুলো এখন খুবই ব্যস্ত। ঢাকার ফকিরাপুল, শ্রীদাস লেন, কেএম দাস লেন, পুরানা পল্টন, মাতুয়াইল, কেরানীগঞ্জ ছাড়াও ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জের ছাপা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ব্যস্ত। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য মোট ১১৬টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সংখ্যায় এটি প্রায় ৩৫ কোটি। মুদ্রণের মতো, বাঁধাই কর্মীদেরও ব্যস্ততার সীমা নেই। মুদ্রণ, পরিবহন ও বাঁধাই শ্রমিকসহ অন্তত ৫৫ হাজার মানুষ দিনরাত কাজ করছেন।
তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার নানা কারণে পাঠ্যবই ছাপার কাজ বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে কাগজ তৈরির প্রধান কাঁচামাল সজ্জা আমদানি করা যাচ্ছে না। দেশের অর্ধেক পেপার মিল এখন উৎপাদনের বাইরে। এছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে মেশিন চালু থাকা অবস্থায় ছাপার কাজ বন্ধ রয়েছে। অনেক কাগজ নষ্ট হয়। উচ্চমূল্যের কারণে সেই কাগজ এখন দুষ্প্রাপ্য। এসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে বছরের শুরুতেই ছোটদের হাতে বই তুলে দেওয়ার কাজ চলছে পুরোদমে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন বলেন, সমস্যা মোকাবিলা করে পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মাধ্যমিকের ছাপা বইয়ের সংখ্যা গতবারের চেয়ে বেশি। প্রাথমিক বইয়ে আমরা একটু পিছিয়ে আছি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়ে মুদ্রণকারীদের কিছু অভিযোগ থাকায় আমরা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে তা সমাধান করেছি। আশা করছি, প্রাথমিক বইটিও দ্রুত ছাপা হবে।
আগে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিশুরা চার রঙের চকচকে বই পেত। এখন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও পাবে রঙিন বই। এ কারণে এই দুই শ্রেণীর পাঠ্যবই আকারে একটু বড়।
তবে আগামী বছরের শুরু থেকে নতুন কারিকুলাম চালু হওয়ায় প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বই পাল্টে যাচ্ছে। পাঠ্যপুস্তক নতুন করে লেখা হয়েছে। এই চার শ্রেণীর শিশুরা জানুয়ারি থেকে সম্পূর্ণ নতুন বই পাবে।
জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ৩৪৮.৫ মিলিয়ন কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ৯ দশমিক ৫ লাখ বই রয়েছে। বই ছাপার কাজ পেয়ে সারাদেশে ব্যাপক লোডশেডিং চলছে বলে জানিয়েছেন মুদ্রণকারীরা। তখন ঢাকা শহরে দৈনিক লোডশেডিং দুই-তিন ঘণ্টা। আর ঢাকার বাইরে লোডশেডিং ছিল সর্বনিম্ন ৩ থেকে ১২ ঘণ্টা। ঢাকায় ৬০ শতাংশ প্রেস, ঢাকার বাইরে ৪০ শতাংশ প্রেস। প্রেস মালিকরা জানান, নভেম্বরের শুরুতে শীত শুরু হওয়ায় লোডশেডিং কিছুটা কমেছে। এনসিটিবি পাঠ্যপুস্তক ছাপাখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুরোধ জানিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে চিঠি দিয়েছে।
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, এ বছর তিনটি বড় সংকট রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ, কাগজ ও কাজ দেরিতে পাওয়া যাচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকলে ডিজেল জেনারেটর দিয়ে প্রেস চালানো যায়। কিন্তু ডিজেলে খরচের কারণে ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রেস মালিকদের। কাগজ তৈরির কাঁচামালের সংকট রয়েছে বলেও জানান তিনি। সবার আগে। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পাল্প আমদানিতে আপত্তি জানায় সরকার। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও পাল্পের দাম বেড়ে যাওয়ায় পেপার মিলগুলো বেশি পাল্প আমদানি করতে পারেনি। ব্যাংকগুলো পাল্পের জন্য এলসি খুলতে পারে না। এলসি খোলার পর তিন মাস পর টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ব্যাঙ্কগুলি৷ বিক্রেতারা আবার এই সাড়া না.
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, এবার সব বই সময়মতো দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ বই ছাপার জন্য কাগজের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের বই ছাপতে ১ লাখ ১৯ হাজার টন কাগজ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার টন এনসিটিবি প্রিন্টিং হাউস কিনেছে। বাকি ৮৫ হাজার টন প্রিন্টাররা নিজেরাই কিনে নেয়। এছাড়া ৩৫ কোটি পাঠ্যপুস্তক ছাপতে সরকার এ বছর ব্যয় করছে ১৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ৩০০ কোটি এবং মাধ্যমিক স্তরে ১০০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।