রাজধানীর ১০ শতাংশ ম্যানহোল ঢাকনাহীন

0

জার্মান দূতাবাসের একজন কূটনীতিকের একটি ছোট টুইট৷ যে কারণে রাজধানীর অভিজাত গুলশান এলাকার খোলা ম্যানহোলগুলো রাতারাতি ঢেকে গেছে। গত সোমবার বিকেলে কূটনীতিক এক টুইট বার্তায় জানান, ম্যানহোলে পড়ে তিনি আহত হয়েছেন। তিন ঘণ্টা পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নজরে আসে ওই বার্তা। পরে ডিএনসিসির মাঠকর্মীরা নেমে আসেন। তবে তিনি দুর্ঘটনাস্থল হিসেবে উল্লেখিত স্থানে কোনো অনাবৃত ম্যানহোলের সন্ধান পাননি। পরে গুলশানের ৭৫ নম্বর সড়কে একটি খোলা ম্যানহোলের সন্ধান পাওয়া যায়। রাতেই তা মেরামত করেন ডিএনসিসির কর্মীরা। পরে গুলশান এলাকায় কভারবিহীন আরও সাতটি ম্যানহোলের সন্ধান পাওয়া যায়। সেগুলোও মেরামত করা হয় এবং লোহার খাঁচার পরিবর্তে স্ল্যাব বসানো হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা নতুন নয়। ২০১৪ সালে, শিশু জিহাদ রাজধানীর শাহজাহানপুরে একটি অনাবৃত ম্যানহোলে পড়ে মারা যায়। ২০১৫ সালে, শ্যামপুরে খোলা ড্রেনে পড়ে আরও একটি শিশু নীরব মারা যায়। এছাড়া বৃষ্টি হলে প্রায়ই ম্যানহোলে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। মাঝেমধ্যেই ম্যানহোলে পড়ে আহত হচ্ছেন শহরবাসী। কিন্তু সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয় না। এবার জার্মান দূতাবাসের উপ-রাষ্ট্রদূতের আঘাতের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে ডিএনসিসি জোন-৩ এর নির্বাহী কর্মকর্তা (গুলশান এলাকা) আবদুল্লাহিল বাকী সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। পরে ডিএনসিসির মুখপাত্র মকবুল হোসেন বলেন, জার্মান কূটনীতিকের টুইটের পরিপ্রেক্ষিতে গুলশান এলাকায় আটটি অনাবৃত ম্যানহোল পাওয়া গেছে। সোমবার রাতে তাদের ঠিক করা হয়। যেখানেই খোলা ম্যানহোল দেখা যায়, সেগুলো দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র। ‘আমার ঢাকা’ অ্যাপসের মাধ্যমেও বিষয়টি জানাতে পারবেন নগরবাসী।

তবে ডিএনসিসির একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ম্যানহোল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা সমস্যায় রয়েছেন।

মাঝে মাঝে কভার চুরি হয়ে যায়। ডিএনসিসি এ পর্যন্ত গুলশান-বনানী থানায় অর্ধশতাধিক সাধারণ ডায়েরি ও মামলা করেছে। কোন কভার কখনও উদ্ধার করা হয়নি. এখন কভার চুরি হলে মামলা তো দূরের কথা, সাধারণ ডায়েরিও নিতে চায় না।

গুলশানের ৮০ নম্বর রোডের নর্ডিক ক্লাবের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা সাদ্দাম বলেন, “এমন কোনো ব্যক্তির ম্যানহোলে পড়ে আহত হওয়ার খবর আমরা পাইনি। আশেপাশে কোনো অনাবৃত ম্যানহোল দেখা যায়নি।

ডিএনসিসি অনুসন্ধান করার পর, তারা ৭৫ নম্বর রুটের ফুটপাতে একটি অনাবৃত ম্যানহোল দেখতে পায়। আরও কয়েকটি সড়কেও কিছু অনাবৃত ম্যানহোল ছিল। ৭৫ নম্বর রোডের ফুটপাতে ড্রেনের বক্সের খাঁচা খোলা ছিল বলে মনে করছে ডিএনসিসি। ৮০ নং রোড এবং নর্ডিক ক্লাবের কাছে হওয়ায় ওই ড্রেন বক্সে পড়ে জার্মান কূটনীতিক আহত হতে পারতেন।

জানা গেছে, ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানির ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর জা জেনোস্কি সোমবার হুইল চেয়ারে বসে ছবিসহ এক টুইটে লেখেন, ঢাকাকে তিনি পছন্দ করেন। কিন্তু তিনি জানতেন, পথে যতই সতর্ক থাকুন না কেন, রাতের বেলা শহরের কোনো একটি কভারলেস ম্যানহোলে পড়ে যাবেন!

বিষয়টি নজরে আসার সাথে সাথে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করে ম্যানহোলের অবস্থান জানতে চান যাতে ডিএনসিসি দ্রুত মেরামত করতে পারে। মেয়রের জবাবে ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর আরেক টুইটে বলেন, গুলশানের ৮০ নম্বর রুটে নর্ডিক ক্লাবের কাছে খোলা ম্যানহোল রয়েছে।

জা জানোস্কির টুইটের পর ছাইয়ে ঘি ঢেলে দেন জার্মান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বার্ন্ড স্পিনার। তিনি আরেকটি টুইটে লিখেছেন যে তিনিও একই ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন। ভাগ্যক্রমে পা ভাঙ্গেনি! কিন্তু একটা পুরনো স্যুটের ট্রাউজার নষ্ট হয়ে গেছে।

জবাবে জা জেনোস্কি বলেন, এক বছরে গুলশানের রাস্তায় তিনজন জার্মানির শিকার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *