সিলেটে বিএনপির মহাসমাবেশ।এই সরকারের বিচার হবে, ক্ষমা নেই

0

প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সিলেটে বড় সমাবেশ করতে পেরেছে বিএনপি। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও দলটির নেতা-কর্মীরা নৌকা, মোটরসাইকেলসহ বিকল্প যানে পায়ে হেঁটে আসেন। কর্মসূচির ‘উনিশ-বিশ’ না হলেও সমাবেশ ঠেকাতে হরতালের কারণে সিলেট বিভাগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির সপ্তম বিভাগীয় গণসভা শুরু হয়। সকাল থেকে থ্রি-জি, ফোর-জি মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মতো সাধারণ মানুষও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।

খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের বাধা, হামলা ও মামলা-মোকদ্দমার অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘এই সরকারের বিচার হবে জনগণের আদালতে। শেখ হাসিনা সরকারের বিচার হবে। তাদের কোন ক্ষমা হবে না।’

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের সুরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আর কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিলে জনগণ তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। আর যদি একজনকে হত্যা করা হয়… আব্দুর রহিম, ভোলায় নূর আলম, নারায়ণগঞ্জের শাওন, মুন্সীগঞ্জের শহিদুল ইসলাম শাওন, যশোরের আবদুল আলীম এই সরকারের পুলিশের হাতে নিহত হন।  সিলেটের জনসভাকে ঘিরে কামালকে হত্যা করেছে. লাখাইয়ে গুলি করেছে। মারধর করেছে।

বিএনপির অবস্থা হেফাজতে ইসলামের মতো হবে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওসব হুমকি দিয়ে কোনো লাভ নেই। মানুষ বাড়ি ছেড়েছে, আর ফিরবে না।’ শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইভিএমে পুলিশ, আমলা, গোয়েন্দারা করবে, সবকিছু পাল্টে দেবে- এটা হবে না। জনগণ এখন ভোট দেখবে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে জনসভার মাঠ ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল। বাধা এড়াতে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগে আসা নেতাকর্মীরা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে দুই রাত কাটান। একই দৃশ্য দেখা গেছে ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরেও। বিএনপির নেতাকর্মীদের জমায়েত মাঠ ছাড়িয়ে দরগাহ গেট, সুবিদবাজার, জিন্দাবাজার জল্লারপাড়সহ প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

একদিনের সমাবেশ তিন দিনব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় মাঠের ক্যাম্পে ও কমিউনিটি সেন্টারের মেঝেতে রাত কাটানো বিএনপি কর্মীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। সমাবেশ চলাকালে পাশের মসজিদে হাজার হাজার শ্রমিককে গাছের ছায়ায় ঘুমাতে দেখা যায়। যারা মাঠে ছিলেন তাদের অনেকেই মাটিতে বসেছিলেন।

টুকরো টুকরো মিছিলে যোগদানকারীরা জাতীয় পতাকা ও ধানের শীষ বাঁশের লাঠিতে বেঁধে রাখে। সংঘর্ষের আশঙ্কায় শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। রিকশা ও অটোরিকশা আলাদাভাবে চলে। কিন্তু সমাবেশ শেষ হওয়ার আগেই বাস চলাচল শুরু হয়।

সমাবেশ ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড়ও ছিল। সুনামগঞ্জের কৃষক ইদ্রিস আলী জানান, তিনি কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। গত বৃহস্পতিবার মাঠের পাকা ধান কাটার পর তিনি আসেন। তিনি অভিযোগ করেন, গত বছর ১৪ বছরেও তিনি ভোট দিতে পারেননি। তাকে কেন্দ্র থেকে বের করে তার ভোট আওয়ামী লীগের কর্মীদের দেওয়া হয়েছিল। তিনি তার দুঃখ প্রকাশ করতে এসেছিলেন।

মাঠে স্লোগান দেওয়া সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার নয়াবন্দ গ্রামের বিএনপি কর্মী কামাল হোসেন বলেন, ১৪ ঘণ্টায় ট্রলারে করে এসেছেন। দুদিন নৌকায় থেকে খেয়েছে। তার মতে, মাঠে ঝুঁকি নিয়ে আসা কর্মীদের ধরে রাখার দায়িত্ব নেতাদের।

গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোবাইল 3-জি এবং 4-জি ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির নির্দেশে অপারেটররা ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়। শুধু ইন্টারনেট নয় মোবাইলে কথা বলাও সমস্যা ছিল।

এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিলেটের কর্মকর্তা কোনো কথা বলেননি। ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী একটি বেসরকারি সংস্থার একজন ব্যবস্থাপক জানান, 3-জি এবং 4-জি বন্ধ রয়েছে। যখন একই এলাকায় বেশি লোক জড়ো হয়, নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *