শীতের তীব্রতায় দমন হবে ডেঙ্গু

0

সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে বাড়ছে অস্থিরতা। অক্টোবরে মশাবাহিত রোগে সর্বোচ্চ ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নভেম্বরের প্রথম ১৬ দিনে ডেঙ্গুতে ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচজন মারা যায়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে মৃত্যুর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাদেশে শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। এ মাসের শেষ নাগাদ এর তীব্রতা বাড়বে। ততদিন পর্যন্ত ডেঙ্গু আশংকাজনক অবস্থা থেকে যাবে। এডিস মশা শীতকালে বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। সেক্ষেত্রে প্রকোপ কমবে। কিন্তু ডেঙ্গু কাটবে না।

এজন্য প্রচারণার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগে সারাদেশে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাস্তবায়ন, জনপ্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণের আহ্বান জানান তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুধবারের বুলেটিনে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৬৭ জন। নতুন করে এ বছর ৫০ হাজার ৭৫৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৭২৯ জন রোগীর মধ্যে ১ হাজার ৫২৮ জন রাজধানীর বাসিন্দা। ঢাকার বাইরে ১ হাজার ২০১ জন। ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৮১৪ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। এ বছর নতুন তিনজনসহ ২১৬ জন মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় ডেঙ্গুতে কম মানুষ আক্রান্ত হলেও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা একাধিক ধরনের ডেঙ্গুর জন্য একই সঙ্গে সক্রিয় ও হাসপাতালে দেরি হওয়াকে দায়ী করছেন। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে ৮১ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ৭২ ঘন্টার মধ্যে মারা গেছে। ডেঙ্গু জ্বরে মোট মৃত্যুর ৪৮ শতাংশের বয়স ৪০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। এ বছর তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। মোট আক্রান্তদের ২৮ শতাংশ তরুণ। রাজধানীতে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হলেও মোট মৃত্যুর ৮৩ শতাংশই ঢাকা বিভাগের বাইরে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইকরামুল হক বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের অজ্ঞতার কারণে আমরা এখনো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন যেভাবে কাজ করছে, তাতে শিগগিরই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘এবার ডেঙ্গু বদলেছে। অক্টোবরের পর সাধারণত ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব হয় না। কিন্তু এবার অক্টোবরের পর নভেম্বরে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। শীতকালে বৃষ্টি কম হলে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে না। সেক্ষেত্রে শীতের তীব্রতা বাড়লে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করছি। এর জন্য আগামী সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আসলে দেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ স্থায়ী হতে শুরু করেছে। এ জন্য সারা বছর এডিস মশা নিধন ও মশার উৎস ধ্বংসের কর্মসূচি রাখতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘ডেঙ্গু যাবে না। আমার অনুমান ডিসেম্বরের শুরুতে প্রাদুর্ভাব কমে যাবে। শীতের কারণে সেটা সম্ভব হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *