হলমার্ক কেলেঙ্কারি।সোনালী ব্যাংকের  টাকা উদ্ধারের নতুন উদ্যোগ

0

বহুল আলোচিত হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ এবং চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামের শর্তসাপেক্ষ জামিনের বিষয়ে সরকার কিছুটা নমনীয় অবস্থান নিয়েছে। আদালতে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। যাইহোক, প্রথমত, সরকার সোনালী ব্যাংক থেকে ২,৫০০ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে চায়।

এদিকে, হলমার্কের চেয়ারম্যান-এমডির অর্থ ও শর্তসাপেক্ষ জামিন আদায়ের জন্য যুগপৎ পদক্ষেপ নিতে রাজি হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে যে শর্তসাপেক্ষ জামিনে অভিযুক্তের মতামত চাইলে তারা নমনীয় মনোভাব দেখাবে। এছাড়াও, হলমার্ককে জামিন এবং ব্যবসা শুরু করার অনুমতি দেওয়ার শর্তে সমস্ত পাওনা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। তানভীর মাহমুদ প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে একটি আবেদনও জমা দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ব্যাংকের পাওনা টাকা পুনরুদ্ধার এবং হলমার্কের চেয়ারম্যান ও এমডির শর্তসাপেক্ষ জামিন একই সঙ্গে হওয়া উচিত। তাদের পাওনা টাকার বিপরীতে নিরাপত্তা হিসেবে পর্যাপ্ত সম্পত্তি দিতে হবে। জামানত হিসেবে তাদের সম্পত্তি বিক্রির জন্য তাদের সোনালী ব্যাংককে কর্তৃত্ব দিতে হবে। এর পরে, আদালতে তাদের শর্তসাপেক্ষ জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং তাদের ব্যবসা শুরু করার সুযোগ দেওয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা উদ্ধার করে রাজ্যের স্বার্থ নিশ্চিত হলে সরকার জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করবে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জাতীয় সংসদের হিসাববিষয়ক স্থায়ী কমিটির একটি উপ-কমিটি বলেছে, হলমার্ক থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নেবে। উপ-কমিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। এই প্রতিবেদনের আলোকে সোনালী ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ছয় দফা চিঠি পাঠিয়েছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্ত -মন্ত্রণালয় বৈঠক করে অর্থ আদায়ের জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, “আমরা কাউকে জেলে রাখতে চাই না। ব্যাংকে টাকা দেওয়া হলে বিষয়টি নিষ্পত্তির দিকে এগিয়ে যাবে। আমি এখনও এমন উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত। সময় এখনও আছে. এ নিয়ে আলোচনার দরজা খোলা।

দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, দুর্নীতি বাজরা যদি আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত দেয়, তা সরকারের লাভ। জাতীয় সংসদের হিসাববিষয়ক উপ-কমিটি ব্যাংকের পাওনা টাকা আদায়ের জন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলেছে, যা একটি ভালো উদ্যোগ। কমিটির সুপারিশগুলি বিদ্যমান আইনের অধীনে যথাসম্ভব পরীক্ষা করে বাস্তবায়ন করা উচিত। দুদক যদি ব্যাংকের পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে অভিযুক্তের মতামত চায়, কমিশন বিষয়টি যাচাই -বাছাই করে তার মতামত দেবে।

সোনালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান বলেন, যদি তানভীর মাহমুদকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়, তাহলে তিনি অর্থ প্রদান করতে পারেন। তবে বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। তবে সংসদীয় উপ-কমিটির দেওয়া নির্দেশনার আলোকে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। যদি সমন্বিত পদ্ধতিতে উদ্যোগ নেওয়ার কাজটি করা হতো, তাহলে ঋণ আদায়ের গতি আরও বাড়ত।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদীয় উপ-কমিটি কর্তৃক আদালতের বাইরে অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়াটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। বিভিন্ন দেশে আদালতের বাইরে এই ধরনের মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার উদাহরণ রয়েছে। মানি লন্ডারিং একটি জিনিস, আর প্রতারণার জন্য জবাবদিহিতা অন্য। একজন আরেকজনের সাথে মিশতে পারে না। টাকা পুনরুদ্ধারের শর্তে জামিন বিবেচনা করা যেতে পারে। এর অর্থ এই নয় যে তাকে জালিয়াতির বিচার থেকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে।

দুদকের মামলায় হলমার্কের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ সময় সোনালী ব্যাংকের  ঋণ পরিশোধ এবং শর্তসাপেক্ষ জামিনের বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। জামিন পেলে তানভীর মাহমুদ ব্যাংকের সব ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি ‘ঋণ আদায় তত্ত্বাবধান কমিটি’ গঠন করতে পারে।

জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ইতিমধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক থেকে আত্মসাতের টাকা উদ্ধারের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং হলমার্কের আইনজীবীকেও ডেকেছেন। পরবর্তীতে হলমার্কের কোন ভূমিকা না থাকায় উদ্যোগটি এগিয়ে যায়নি। হলমার্কের একজন প্রতিনিধি জানান, তাদের শিল্প গ্রুপের চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আছেন। ব্যবসা -বাণিজ্য সব বন্ধ। এই পর্যায়ে হলমার্কের মালিক থেকে সরকারের সাথে কথা বলার কেউ নেই। তানভীর মাহমুদ তার আইনজীবীকে সরকারের সাথে কথা বলতে বলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *