খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩১ হাজার কোটি টাকা

0

করোনার কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে ঋণ পরিশোধে বিশেষ শিথিলতা ছিল। এই বছর, কেউ যদি সময়মতো কিস্তি পরিশোধ না করে তবে তারা খেলাপি। এ কারণে খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। অনেকে আবার কোনো না কোনোভাবে বিশেষ ছাড় পাবেন এই ধারণায় খেলাপি হচ্ছেন। তবে এমন গ্রাহকও আছেন যারা বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটসহ নানা কারণে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরের তুলনায় যা ৩১ হাজার ১২২ কোটি টাকা বা ৩০ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, খেলাপি ঋণ বেড়েছে শতাংশের পাশাপাশি পরিমাণের দিক থেকেও। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তিন মাস আগে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপির হার ছিল ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আর গত ডিসেম্বর শেষে ১ লাখ ৩ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর মানে প্রতি ত্রৈমাসিকে হার বেড়েছে।

ব্যাংকাররা বলেন, একটি শ্রেণি সব সময় ঋণ খেলাপি হওয়ার পথ খোঁজে। করোনার কারণে ২০২০সালে কেউ এক টাকা না দিলে তিনি খেলাপি হননি। যদি কেউ পরের বছর বকেয়া পরিমাণের ১৫ শতাংশ পরিশোধ করে, তবে তাদের আর কোনো টাকা দিতে হবে না। বিশেষ ছাড় পাওয়ার আশায় সামর্থ্য থাকলেও ঋণ পরিশোধে শিথিলতা পোষণ করছেন অনেকে। আয় থাকলেও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে তিনি ঋণ পরিশোধ করছেন না। যার কারণে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল নীতি শিথিল হলেও তেমন সাড়া নেই।

ব্যাংকারদের মতে, ব্যবসায়িক অবস্থা খারাপের কারণে গ্রাহকদের একটি অংশ তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। কারণ করোনার ধাক্কা কাটিয়েই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিশ্ববাজারে কাঁচামালসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও গ্যাস না থাকায় অধিকাংশ কারখানায় ধারণক্ষমতার কম উৎপাদন হচ্ছে। আমদানিতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ডলার সংকটের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান এলসি খুলতে পারছে না। এর মধ্যে রয়েছে ভোক্তাদের ওপর উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব। এর বাইরে গত জুলাই মাসে জ্বালানি তেলের দাম ৪৭ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় সব ক্ষেত্রেই বাড়তি খরচের চাপ রয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

জানতে চাইলে ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, করোনা পরবর্তী অর্থনীতিতে চাপ ছিল। এটি মোকাবেলা করতে সক্ষম না হয়ে আরেকটি বিশ্বব্যাপী সংকট চলছে। যার কারণে বেশির ভাগ জিনিসের দাম বেড়েছে এবং বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। আবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে অনেক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এগুলো ছাড়াও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পেছনে একটি বড় কারণ ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব। অনেক ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ আদায়ে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা পাওয়া যায় না। মামলা নিষ্পত্তি করতে অনেক সময় লাগে। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণের এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দশটি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৬ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৬৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। খেলাপি ঋণের দিক থেকে শীর্ষে থাকা এসব ব্যাংক হলো রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, সোনালী, অগ্রণী, বেসিক, রূপালী, বেসরকারি ন্যাশনাল, ইসলামী, এবি, পদ্মা ও ওয়ান ব্যাংক। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ হাজার ২১৫ কোটি বা ৬১ দশমিক ২১ শতাংশ ছিল এসব ব্যাংকে।

প্রসঙ্গত, আবদুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর খেলাপি ঋণসহ চারটি সূচকের ভিত্তিতে খারাপ অবস্থায় থাকা ১০টি ব্যাংক আলাদাভাবে তদারকির উদ্যোগ নিয়েছে। তালিকায় শীর্ষ খেলাপি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, এবি ও ওয়ান ব্যাংক। এছাড়া রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, আইসিবি ইসলামী ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। এর পরিমাণ কম হলেও এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার অনেক বেশি। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের মোট ঋণের ৯৭ দশমিক ৯০ শতাংশই খেলাপি। ব্যাংকটির ১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে খেলাপি ১ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *