বিনামূল্যে ডেঙ্গু টেস্টেও গুনতে হয় ফি

0

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা ছাড়া দেশের সব জেলায় দেখা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রোগীদের নিয়ে। ২০১৯ সালেও এমন একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি হয়েছিল। এ সময় সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। তখন এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। তবে তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ; কোনো সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজি নয়। অধিদফতরের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হলেও সব পরীক্ষার জন্য ফি নেওয়া হচ্ছে।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতাল থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হয়। রোগীদের ওষুধও কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। কোন মশারি বা মশা নিরোধক প্রদান করা হয় না. তিনটি সংশ্লিষ্ট পরীক্ষায় টাকা নেওয়া হচ্ছে; একটি সাধারণ NS-1 অ্যান্টিজেন পরীক্ষা, Polgatilate ঠিক আছে কিনা তা দেখতে CBC এবং অ্যান্টিবডির পরিমাণ জানার জন্য IgM পরীক্ষা। এতে দরিদ্র ও দুর্বল রোগীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। আর্থিক সংকটে তারা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারছেন না।

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনটি পরীক্ষার জন্য রোগীকে এনএস-১-এর জন্য ১০০ টাকা, সিবিসি-র জন্য ২৫০ টাকা এবং আইজিএম-এর জন্য ২৫০ টাকা দিতে হয়। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, উত্তর সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় কোভিড হাসপাতালসহ প্রায় সব হাসপাতালেই এ অবস্থা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে ৪৬টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করলেও বেশির ভাগ কেন্দ্রে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন অজুহাতে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রোগীদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রমাণও রয়েছে।

এদিকে বেসরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন দামে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পরীক্ষার জন্যও নতুন নির্দেশ জারি হতে পারে। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলো এনএস-১ অ্যান্টিজেন টেস্টের জন্য সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, আইজিজি ও আইজিএম-এর জন্য ৫০০ টাকা এবং সিবিসি পরীক্ষার জন্য ৪০০ টাকা চার্জ করার নতুন নির্দেশনা জারি করবে। এসব পরীক্ষায় কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সেবামূল্যের বেশি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরের পর বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর পরে নির্দিষ্ট ফি নেওয়া হয়।

তবে ভিন্ন তথ্য মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু পরীক্ষা বিনামূল্যে করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী আমি ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছিলাম। সম্প্রতি একটি নতুন নির্দেশনা পেয়েছি। সেখানে উল্লেখ করা হয়, নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে।

উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, গত বছর থেকে আমরা নগরীর ৪৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করে আসছি। তবে যেসব কেন্দ্রে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, সরকারের মতে, এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ হাজার, আর মৃত্যু হয়েছে ১৬২ জনের। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৩ হাজার ৬৬০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৪৯৮ জন। চলতি মাসের চার দিনে সাড়ে তিন হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২১ জন মারা গেছেন। এ বছর সবচেয়ে বেশি রোগীর সংখ্যা ছিল অক্টোবরে, যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১ হাজার ৯৩২ জন। তাদের মধ্যে ৮৬ জন মারা গেছেন। বর্তমানে ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, ডেঙ্গুর সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধও দেওয়া হচ্ছে। সব জেলায় ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গুর পরীক্ষা বা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *