সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

0

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সংসদে অভিযোগ করেছেন, বৈশ্বিক মন্দার কারণে দেশের বর্তমান ক্রান্তিকালকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীরা অশান্ত রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। বিএনপি-জাতীয় দলসহ সব বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “দেশ যখন সংকটে, তখন তাদের মধ্যে কোনো উদ্বেগ থাকে না, বরং তারা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে। তাহলে কোথায়? রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য সংকটের সুযোগ নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের প্রবণতা পরিহার করতে হবে।

আজ সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। মুজিবুল হক তার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার কথা বলেছেন; এখানে আমার প্রশ্ন? দেশ যখন এমন সংকটে, তখন যারা বিরোধী দলে; আমি সবার কথা বলছি- তাদের মধ্যে সেই উদ্বেগ দেখিনি। ঐক্য শুধু কথা বললে চলবে না, নিজের পাশে দাঁড়াতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন এলাকার উন্নয়নে কে আমাদের ভোট দিয়েছে আর কাকে দেয়নি তা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। জনগণের জন্য আমাদের উন্নয়ন। মানুষের কথা চিন্তা করেই কাজ হয়। একইভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করতেও বসেনেই সরকার। অনেকেই সমালোচনা করছেন, বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু এক মুঠো চাল দিয়ে বা হাতে দিয়ে কাউকে পানি থেকে উদ্ধার করতে দেখা যায়নি। আমরা সবসময় ঐক্যে বিশ্বাসী। যারা আসবে তাদের নিয়ে কাজ করব। এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই.

সংসদ নেতা বলেন, “যুদ্ধের ভয় ও পণ্য বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি খোলাখুলি কথা বলেছেন। যদিও অনেকেই তার সমালোচনা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এভাবে কথা বললে মানুষ ভয় পাবে। ভয় নয়, মানুষকে সতর্ক করার জন্য বলা হয়। শুধু সতর্কতা নয়, অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য পরিবহনেও ব্যাঘাত ঘটছে। যেখানে খাদ্য বা তেল কেনা হয়েছে; যুদ্ধের কারণে তা কেনা যাচ্ছে না। বিকল্প অবস্থান রয়েছে। সেখান থেকে খাদ্য, ডিজেল, তেল, সার আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে, এলএনজি আমদানিরও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

পাবলিক ফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এখনো অনেক উন্নত দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমরা যদি সহ বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করি তাহলে ইউরোপ, আমেরিকা, গ্রেট ব্রিটেন, দেখা যায় সর্বত্র জ্বালানী তেলের ঘাটতি, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সর্বত্র লোডশেডিং। গ্রেট ব্রিটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ শতাংশ বেড়েছে। তারা সব কিছুর রেশন করছে। সেই পরিস্থিতিতে চেষ্টা রয়েছে। এর প্রভাব যাতে আমাদের দেশে না পড়ে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিএনপির রুমিন ফারহানা একটি শীর্ষ স্থানীয় জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির প্রতিবেদন এবং বিশ্ব খাদ্য প্রকল্পের প্রতিবেদনের পরিপূরক প্রশ্নে উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ খাদ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে খাদ্যের দাম সবচেয়ে বেশি। দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকা ৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।’ এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের কথা জানতে চান তিনি।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু লোক আছে যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে এবং তিনি (রুমিন) সেসব লোকের কথা বলেছেন। নামের একটি পত্রিকা তিনি কখনো পড়েন না। কারণ তারা সবসময় বিপরীত। তারা কখনই চায় না গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক। তারা একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি পছন্দ করে। তারা তাদের আত্মসম্মান বাড়ানোর জন্য এটি করে। আমি জানি না তারা কোথা থেকে আপনার উল্লেখ করা কোম্পানির হিসাব পায়। এই হিসাব কখনই তাদের সঠিক হিসাব নয়। দাম বাড়ার বিষয়টিও অস্বীকার করছেন না তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *