কুইক রেন্টাল-ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে প্রশ্ন

0

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানতে চেয়েছে কত দিনের ভাড়া-কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ক্ষমতা চার্জ টানা হবে। তারা বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি না দিয়ে বাণিজ্যিক ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেন। বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আইনের বিশেষ বিধান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া আইএমএফ তেলভিত্তিক প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ কেনার প্রক্রিয়া, লোডশেডিং, বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছে।

গতকাল ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে। বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবি এ বিষয়ে আইএমএফকে ব্রিফ করেছে। পিডিবি জানিয়েছে, বাণিজ্যিক ঋণের চেয়ে ভর্তুকি তাদের জন্য বেশি সুবিধাজনক।

এদিকে সচিবালয়ে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অপর এক বৈঠকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে উত্তরণের পর বাজার সহজীকরণ ও রপ্তানি, তৈরি পণ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। একটি একক খাতের উপর নির্ভরতা কমিয়ে গার্মেন্টস, আঞ্চলিক ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, শুল্ক হার।

প্রতিনিধি দলটি গতকাল সকালে সচিবালয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বিকেলে বিদ্যুৎ ভবনে পিডিবির সঙ্গে বৈঠক করে। বিদ্যুৎ বিভাগের বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান। সভায় নেতৃত্ব দেন পিডিবির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বিদ্যুতে ভর্তুকি বাড়ছে। গত অর্থবছরে (২০২১-২২), পিডিবিকে বেসরকারি প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ভর্তুকি বাবদ প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকা দিতে হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ৪৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা যাবে বলে মনে করছে পিডিবি। এদিকে, গত ১২ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের ক্যাপাসিটি চার্জ (উদ্যোক্তাদের ব্যবস্থাপনা ও চুক্তি অনুযায়ী অন্যান্য খরচ হিসেবে দেওয়া অর্থ) বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের দিতে হয়েছে সরকারকে।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আইএমএফের কাছে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। এই সহায়তা চাওয়ার পর আইএমএফ বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকসান কমাতে সরকারকে চাপ দিচ্ছে। এসব বিষয়ে আলোচনা করতে সংস্থাটির এশিয়ান অ্যান্ড প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি দল ঢাকা সফর করছে। গত ২৬ অক্টোবর থেকে তারা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের বৈঠকের কথা রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের বৈঠক: সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগের বৈঠকে ভাড়া কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের বিষয়ে জানতে চায় আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এ সময় বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, সংকটকালে স্থাপিত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সক্ষমতা চার্জ-সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী তাদের ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে। এখন সরকার এসব চুক্তি থেকে সরে আসছে। নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ‘বিদ্যুৎ নেই, কোনো অর্থ পরিশোধ নয়’ ভিত্তিতে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ দিতে না পারলে তারা কোনো টাকা পাবে না। প্রতিনিধি দলের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, বেশির ভাগ রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের চুক্তি শেষ হয়েছে। কয়েকটা আছে, যেগুলো আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে।

আলোচনায় আইএমএফ প্রতিনিধিরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষ বিধান কতদিন চলবে তা জানতে চান। স্বচ্ছতার জন্য তারা টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকল্প নেওয়ার ওপর জোর দেন।

বিদ্যুত ও জ্বালানির দ্রুত সম্প্রসারণ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ এর অধীনে দীর্ঘদিন ধরে দরপত্র ছাড়াই আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প প্রদান করা হয়েছে। দুই বছরের আইন বারবার বাড়ানো হয়েছে। এ আইনে গৃহীত প্রকল্পগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এই আইনের আওতায় নেওয়া প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনাক্রম্যতা দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিনিধি দল পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্র, তেলের ব্যবহার, লোডশেডিং, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় ভর্তুকি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি লাগবে। লোডশেডিংয়ের জন্য, এটি জ্বালানির উপর নির্ভর করে। জ্বালানি খাত থেকে তেল ও গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে লোডশেডিং হবে না। তবে বিশ্বে তেল-গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির বর্তমান কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণের সম্ভাবনা কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *