লোডশেডিংয়ে ভুগছে রূপগঞ্জের কলকারখানাগুলো

0

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দুই হাজার শিল্পকারখানা বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে ভুগছে। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কোনো কোনো দিন ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। উৎপাদন সচল রাখতে জেনারেটর চালানোয় খরচ বেড়েছে। লোডশেডিং না কমলে কলকারখানা চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়া গ্যাসের চাপ কম থাকায় জেনারেটর চালাতে হয় বোতলজাত গ্যাসে। ফলে খরচ বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।

জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার যাত্রামুড়া, বরব, বরপা, ভুলতা, আড়িয়াবো, কারাঙ্গপ, গোলাকান্দাইল, মুড়াপাড়া, কাঞ্চন, হাতবো, সাওঘাট, কাটারচক, দোহারগাঁও, পাড়াগাঁও, মুড়াপাড়া, বনিয়াদি এলাকায় বেশির ভাগ শিল্প রয়েছে। এসব কারখানায় প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, থ্রি-পিস, চাদর, প্রিন্টেড কাপড়, লুঙ্গি, পলিগাস্টিক পণ্য ইত্যাদি তৈরি হয়। এছাড়াও রয়েছে নিটিং ডাইং এবং ফিনিশিং কারখানা।

কারখানা মালিকরা বলছেন, গ্যাস সংকট বেড়েছে। ঘন ঘন লোডশেডিং। কারখানা চালু রাখতে ডিজেল জেনারেটরের ব্যবহার বেড়েছে। অনেক কোম্পানি সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস এনে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৫০ শতাংশ। লোডশেডিং আবাসিক খাতেও জনজীবন ব্যাহত করেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।

কাটারচক এলাকায় অবস্থিত গ্রামটেক নিট ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র ম্যানেজার আইয়ুব হোসেন বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানাটি চালু রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গ্যাস দিয়ে জেনারেটর (ক্যাপটিভ ইলেকট্রিসিটি) চালানো যাবে না। গ্যাসের চাপ খুবই কম। সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস কিনে জেনারেটর চালানো হচ্ছে।

গোলাকান্দাইল এলাকার জুনায়েত ফ্যাশন গার্মেন্টসের মালিক ইমরান হোসেন জানান, তার কারখানায় টি-শার্ট তৈরি হয়। বিদ্যুৎ নির্ভর কারখানাটি দিনে ১২ থেকে ১৫ বার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হয়। কারখানার তিন শতাধিক শ্রমিককে দিনের একটা বড় অংশ অলস বসে থাকতে হয়। এতে উৎপাদন অর্ধেক কমে গেছে। তবে শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খরচ যথাযথভাবে বহন করতে হয়। এতে লোকসান হচ্ছে।

ভুলতা এলাকার ভাই ভাই এমব্রয়ডারি কারখানার মালিক আলিনু বেপারীও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, লোডশেডিং না কমাতেই লোকসান বাড়ছে। কাঞ্চন এলাকায় বিএম টেক্সটাইল নামের বিছানার চাদর তৈরির কারখানার ব্যবস্থাপক সাদিকুর রহমান জানান, কাঞ্চনে প্রায় ৩০টি বেডশিট তৈরির কারখানা রয়েছে। এই চাদর দেশের বাইরেও যায়। লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন অর্ধেক হয়ে গেছে।

বরপা এলাকার অ্যান্টিম নিটিং ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানার এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুতের অভাবে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে ডিজেলে। এতে প্রতি মাসে খরচ বেড়েছে এক কোটি টাকা। এখনও উৎপাদন প্রায় ২০% কমছে।

গাউছিয়া পাইকারি কাপড়ের বাজারের ব্যবসায়ী ও সাকিব ফেব্রিক্সের মালিক সেলিম মিয়া বলেন, একদিকে সুতার দাম বেশি, অন্যদিকে লোডশেডিং ও গ্যাসের সংকট রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে পথে বসতে হবে শিল্প মালিকদের। এমব্রয়ডারি কারখানার মালিক আলামিন মিয়া জানান, আগে যে থ্রি-পিস এমব্রয়ডারি করতাম তার তুলনায় কাজ কম পাওয়া যাচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ পালগী বিদ্যুৎ সমিতি সাওঘাট জোনের মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, চাহিদার তুলনায় আমরা কম বিদ্যুৎ পাচ্ছি। কোন দিন ৪০% লোডশেডিং, কোন দিন ৩০% লোডশেডিং হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *