সরেজমিন চট্টগ্রাম।পথে পথে মৃত্যুর ফাঁদ

0

চট্টগ্রাম শহরের পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার চশমা খাল। গত তিন মাসে খালে পড়ে এক নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। শহরের ষোলশহরের ২ নম্বর গেট থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত চার কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি কোথাও দেখা যায়নি। কোন সতর্কতা নেই। শহরের বাদুরতলার হারেশ শাহ মাজার লেনে পুরো খালটি খোলা। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা ও খালগুলো একঘেয়ে হয়ে যায়। শুধু এই দুটি খালই নয়, গত বৃহস্পতিবার শহরের অন্তত পাঁচটি খাল এবং ৫০ টিরও বেশি খাল। একের পর এক মৃত্যু সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ খালে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও স্ল্যাব বসানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শহরের ১৩৭ কিলোমিটার খাল ও খালের অর্ধেক অংশে কোনো স্ল্যাব ও নিরাপত্তা বেষ্টনি নেই। সম্প্রতি এই খালে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীসহ চারজন মারা গেছেন। গত ছয় বছরে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে আহত হয়েছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন চট্টগ্রাম সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, একের পর এক মানুষ খালে পড়ে মারা যাচ্ছে। কিন্তু তারা একে অপরকে দোষারোপ করতে ব্যস্ত। দুর্ভাগ্যবশত তাদের ভূমিকা এখনও অপরিবর্তিত। তাদের উচিত দ্রুত খালগুলো ঘিরে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত চাক্তাই খালের দৈর্ঘ্য ছয় কিলোমিটার। চকবাজারের ঘাসিয়াপাড়া এলাকায় খালের পাশে রাস্তা। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে হাজী আরবান আলী রোডে শিশুদের খেলা করতে দেখা গেছে। কিন্তু খালের পাড়ে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনি নেই। এখানকার বাসিন্দা দুর্জয় দাস বলেন, “এক সপ্তাহ আগে আশা ও আদি নামে দুটি শিশু খেলাধুলার সময় একটি খালে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে লোকজন খালে নেমে তাদের তুলে নেয়। বৃষ্টি হলে রাস্তা ও ড্রেন আলাদা করা যায় না। প্রবল স্রোত থাকে।এমনকি আপনি রাস্তায়্ও হাঁটতেও পারবেন না।

২৫ আগস্ট, মুরাদপুরের রাস্তা ও খাল জলাবদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ নিখোঁজ হন। তাকে এখনো পাওয়া যায়নি। মুরাদপুর থেকে ২ নম্বর গেট পর্যন্ত পুরো খালটি এখনও খোলা।

একটি কালভার্ট শহরের বায়েজিদ বোস্তামী রোডের ডানদিকে মাত্র কয়েকশ মিটার। তার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে চশমা খাল। কালভার্ট অতিক্রম করার সাথে সাথে খালের বাম তীর ধরে একটি রাস্তা চলে যায়।৩০ জুন, একটি সিএনজি অটোরিকশা এই রাস্তা থেকে চশমা খালে পড়ে যায়। চালক সুলতান এবং যাত্রী খাদিজা বেগম প্রবল স্রোতে ভেসে যান। পরে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও খালের পাড় এখনও অনিরাপদ। নেই কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী। খালপার এমআর ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস কর্মচারী। সবুজ বলেন, ‘ঘটনার পর অনেকেই এখানে এসেছিলেন। এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

২০১৫ সালে, শহরের আগ্রাবাদ সিএন্ডবি কলোনির কাছে বিল্লাপাড়া নাসির খালে একটি সিএনজি অটোরিকশা পড়ে গেলে ব্যবসায়ী ফিরোজ জামান খান এবং চালক মাহবুবুর রহমান নিহত হন। স্থানীয়দের মতে, বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এবং যখন জলাবদ্ধতা থাকে, তখন রাস্তা এবং খালের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। একই অবস্থা মির্জা খাল এবং হিজড়া খালেরও।

শহরের বাদুরতলায় হরেশ শাহ মাজার লেন। খোলা ড্রেনের পাশের রাস্তা। শহরের বহদ্দারহাট থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত খালটি প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ। এই ড্রেনের কোথাও কোন স্ল্যাব নেই। এখানকার ব্যবসায়ীদের মতে, বৃষ্টি হলে রাস্তা ও খাল বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। প্রবল স্রোতের কারণে, তাদের ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার আত্মবিশ্বাসও নেই।

প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী বলেন, “আমরা শুধু ডিপিপিতে উল্লেখিত কাজ করছি। যেখানে প্রকল্পের কাজ করা হয় সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনি এবং সতর্কতা দেওয়া হয়। ব্যানারও ঝুলানো হয়। যেখানে এখনও কাজ শুরু হয়নি, এটি আগের অবস্থায় আছে। ‘

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *