সরেজমিন গাইবান্ধা।আমরাই টিপে দিচ্ছি, কষ্ট করা লাগবে না

0

পাঁচজন নৌকার এজেন্ট দাবিদার একটি ভোটকেন্দ্রের কক্ষে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অন্য প্রার্থীদের সেখানে এজেন্ট নেই। দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার জানান, অন্য এজেন্টরা আসলেও ১০ মিনিটও টিকতে পারেননি। পরে তারা বাইরে গিয়ে কেন্দ্রের পরিস্থিতির কথা জানান। যার কারণে এখন ভোটার নেই।

বুধবার সকাল ১১টার দিকে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার নয়াবন্দর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখানে খালি ঘরে বসে আছেন।

কেন্দ্রের বাইরে কথা হয় ৬০ বছর বয়সী কাবুল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোটে জনগণের আর আস্থা নেই। আপনি যদি ভোট দেন, যাই করেন না কেন। দেশে শান্তি নেই।

একই উপজেলার বড়াইকান্দি কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, সকাল ৬টা থেকে নৌকা ছাড়া অন্য মার্কার এজেন্টদের প্রবেশ নিষেধ। কেন্দ্রের কাছাকাছি যেতেই তাদের ধাওয়া করা হচ্ছে। গোপন কক্ষে ঢুকে নৌকার ব্র্যান্ডে ভোট দিচ্ছেন এজেন্টরা। কোনো শৃঙ্খলা নেই। নৌকা মার্কার কার্ড নিয়ে বুথের চারপাশে তিন-চারজন লোক।

মুন্সিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে আজিজুল নামে এক ভোটারকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আমজাদ হোসেন নামে এক বৃদ্ধ বাবাকেও মারধর করা হয়। আজিজুল জানান, ভোট দিতে কেন্দ্রে প্রবেশ করলে কয়েকজন যুবক তাকে নৌকা মার্কায় সিল দিতে বলেন। এতে তিনি রাজি না হলে বেদাম তাকে বের করে নিয়ে মারধর করে। এ কেন্দ্রে কর্মরত পুলিশ সদস্য মিনহাজুল বলেন, কেন্দ্রের বাইরের কোনো কিছুর জন্য তারা দায়ী নয়। কেন্দ্রের ভেতরে বহিরাগতরা কীভাবে অবস্থান করছে জানতে চাইলে মিনহাজুল কোনো উত্তর না দিয়ে ভেতরে চলে যান।

সকাল ৯টায় বরকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কথা হয় কৃষক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই ব্যারাক সিল করে দিতে কোনো সমস্যা নেই। এমনকি ভোট দেওয়ার কোনো বুদ্ধিও নেই তার। মেচিনট (ইভিএম মেশিন) টিপ এবং শান্তিতে ভোট দিন। কিন্তু চেংরাপাংরা ঝামেলাপূর্ণ। ভোটের সামনে মরব না। আমরা ভয়ে ভোট দেইনি।’

মাথারপাড়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আসা ফলকদুনি বেগম হাতের দাগ দেখিয়ে বলেন, ভোট হয়েগেছে। কিন্তু আমি ভোট দিনেই। অন্য কেউ আমার ভোট মেশিনে চিহ্ন টিপে. আমার দাদীও তাই করছে। তারা বলে আপনি আমাদের লোক। আমি জানি আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। তাই আমরা টিপে দিচ্ছি, বিরক্ত করবেন না। তুমি কালি দিয়ে নাও।’

এ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, এসব হওয়ার কথা নয়, কিন্তু হচ্ছে। আমরাও দেখছি, কিছু করার নেই। আমি যতক্ষণ পারি এভাবে বসে থাকি।

কামারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ভোট গ্রহণে নানা অনিয়ম হয়েছে। অনেকেই গোপন কক্ষে প্রবেশ করছেন বিনা বাধায়। সহায়তার নামে অবৈধভাবে প্রবেশ করে ভোটারদের ভোট দিতে বাধ্য করছে।

বারকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বিশুষ্ণপদ সিং জানান, যতক্ষণ খোলা ছিল ততক্ষণ তার কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতিও ভালো ছিল।

মাঠ পরিদর্শনে দেখা গেছে, দুপুরে ভোটগ্রহণ বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র ফাঁকা ছিল। তবে সাঘাটা উপজেলা সদরের বোনারপাড়া বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এই কেন্দ্রটি নৌকার প্রার্থী কেন্দ্র হিসেবেও চিহ্নিত। এখানে মোট ভোটার ছিল ৩ হাজার ১৫৪ জন। সকাল ১১টায় ভোট পড়েছে ৫১২টি। অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় এখানে ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি।

দলদলিয়া স্কুলে ভোটের ধরনও একই ছিল। সকাল সাড়ে ১১টায় প্রিজাইডিং অফিসার সুকর্ণ মণ্ডল জানান, তার কেন্দ্রে ১৩৭টি ভোট পড়েছে। যেখানে মোট ভোটার ছিল ২১ হাজার ১১ জন। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে রাঘবপুর স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ১০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *