বুথে ডাকাত ঠেকাতে না পেরে ভোট বাতিল।গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত

0

গোপন ভোটকেন্দ্রে বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা আগে ঢাকার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এ ঘোষণা দেন। তার মতে, যারা ভোটকেন্দ্রে ঢুকেছে তারা ডাকাত; এরাই হল বদমাশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নির্বাচনী অনিয়মের কারণে পুরো ভোট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত সাম্প্রতিক অতীতে হয়নি বলে জানিয়েছেন ইসি-সংশ্লিষ্টরা। অনিয়ম ও গোলযোগের কারণে অতীতে কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল হলেও সব কেন্দ্রের ভোট বাতিলের ঘটনা নজিরবিহীন। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে একতরফা আখ্যায়িত করে সিইসির শাস্তি দাবি করেন তারা।

এদিকে গতকাল রাতে ইসি কার্যালয়ের উপ-সচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম ও সিসি ক্যামেরার সরাসরি তত্ত্বাবধানে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের চরম ব্যর্থতার কারণে। ইসি কার্যালয় থেকে সব ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ অন্য প্রার্থীরা একযোগে সকাল সাড়ে ১১টায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন।

ইসির এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ। গতকাল রাতে এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এই উপনির্বাচনে কোনো মারামারি-কোন্দল না থাকলেও ইসির নির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্ত তাদের কাছে বোধগম্য নয়। কোনো কেন্দ্রে কোনো বিশৃঙ্খলা বা বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। অন্তত কোনো কেন্দ্রে মারামারি হয়নি।

নির্বাচনের পর এক বিবৃতিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ভোট পুনঃতফসিল দাবি করেন। নির্বাচন বাতিলের সিদ্ধান্তের জন্য ইসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ভোট শুরু হওয়ার পরপরই অধিকাংশ কেন্দ্র থেকে সরকারি দলের সমর্থকরা লাঙ্গল প্রার্থীদের এজেন্টদের জোর করে বের করে দেয়।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি বলেন, আরপিও (জনপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ) এর ৯১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ করতে হবে। কমিশন যদি মনে করে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে না, তাহলে একটি কেন্দ্র বা সব কেন্দ্রে নির্বাচন বন্ধ করার দায়িত্ব কমিশনকে দেওয়া হয়। সেই বিধানের আলোকে আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।

ইসির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নিঃসন্দেহে এই পদক্ষেপ ইতিবাচক এবং সাধুবাদ জানানো যায়। এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসি তার হারানো বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পেতে পারে। এ সিদ্ধান্তকে দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ইসিকে বুঝতে হবে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ, একটি উপনির্বাচনে ইসি হয়তো সিসিটিভি ব্যবহারের মাধ্যমে অনিয়ম শনাক্ত করতে পেরেছে। একইসঙ্গে যখন ৩০০ আসনে নির্বাচন হবে, তখন তাদের জন্য এমন ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। এখন তারা ঢাকায় বসে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। তাহলে আর সম্ভব হবে না। সংবিধান অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠু ভোট দেওয়া। তাই তারা বর্তমান সরকারকে বলতে পারেন দলীয় সরকারের অধীনে আমাদের পক্ষে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়।

ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশ প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভূমিকায়: ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে পুলিশ পাহারা ও ম্যাজিস্ট্রেটদের টহলের মধ্যে ভোটের মাঠে নানা অনিয়ম এবং একজনের ভোট গ্রহণের ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। অন্য ব্যক্তির কাছে। কেন্দ্রের বাইরে সাধারণ ভোটারদের মারধর করতেও দ্বিধা করেননি নৌকা সমর্থকরা। এছাড়া ঢাকা থেকে সিসিটিভির চিত্র দেখে একের পর এক কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেও স্থানীয় প্রশাসন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। কেন্দ্রের চারপাশে ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে মোবাইল টিম এলোমেলোভাবে ঘুরে বেড়ায়। বুথের ভেতরে নৈরাজ্যের কথা জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো কিছু কেন্দ্রে সিসিটিভি সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বেশির ভাগ কেন্দ্রে পুলিশ সদস্যরা সময় পার করেছেন।

এর আগে দুপুর ১২টার কিছু আগে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাড়া অন্য চার প্রার্থী অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে অবস্থানকারী দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ উদাসীন রয়ে গেছে। সকাল ৮টায় সাঘাটা উপজেলার ৮৮টি ও ফুলছে ৫৭টি কেন্দ্রসহ ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২টি বুথে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *