এনআইডি যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।ক্ষুব্ধ ও হতাশ ইসি কর্মকর্তারা, মাথা ঘামাতে চান না সিইসি

0

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ও হতাশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ইসি এনআইডি নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তে ভোটার তালিকায় কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না বলেও মনে করেন তিনি।

মঙ্গলবার ইসি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি এ মন্তব্য করেন। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০২২’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে জন্মের পর নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এই আইন পাস হলে এনআইডি সেবা ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সেবা বিভাগে চলে যাবে। ২০১০ সালের আইন অনুযায়ী তা এখনও ইসির হাতে।

ইসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের আওতায় কাজ শুরু হলেও পরে তারা ইসির অধীনে একটি মহকুমায় এনআইডির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কাজে দায়িত্বের চেয়ে আবেগ বেশি তাদের। অপর্যাপ্ত জনবল নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে এনআইডি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। যথোপযুক্ত লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকা সত্ত্বেও তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে এনআইডি আজ অনেক বড় পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুরুতে বিনামূল্যে এই সেবা দেওয়া হলেও এখন সরকার এর থেকে রাজস্ব পাচ্ছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে ভোটার তালিকার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলেও মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে তারা কে এম নুরুল হুদা কমিশন ও বর্তমান কমিশনকে একাধিকবার তাদের বক্তব্য জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবারও তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। তারা আবারও সিইসির মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবে।

সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সারাদেশে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। মাঠ পর্যায়ে সেনা সদস্যদের সহায়তায় ২০০৭ সালের শেষ দিকে এ কাজ শুরু করেন ইসি কর্মকর্তারা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে ভোটার তালিকার এই ডাটাবেজ ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু হয়।

সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে খসড়া আইনের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হলেও, এটি কীভাবে হস্তান্তর করা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে মনে করছেন অনেকে। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রণয়নের ক্ষমতা ইসিকে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য অনেকের চোখেই মূল চ্যালেঞ্জ হবে ভোটার তালিকা থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র আলাদা করা। ছবিসহ ভোটার তালিকার তথ্য দিয়ে এনআইডি কার্ড তৈরি করা হয়। সারাদেশে উপজেলা সদরে পৃথক সার্ভার সেন্টার খোলা হয়েছে এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। তাই এনআইডি হস্তান্তর হলেও জাতীয় তথ্য ভান্ডার বা সার্ভারের কর্তৃত্ব ইসির কাছে থাকবে কি না তা স্পষ্ট নয়।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের হয়রানি আরও বাড়তে পারে। নতুন সংগঠন গঠন করে এনআইডির দায়িত্ব ওই প্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত করারও পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, এনআইডি হচ্ছে ইসির ভোটার তালিকার কেনা পণ্য। তাই এ দায়িত্ব ইসির হাতে থাকাটাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। জনবল বাড়িয়ে ইসির অধীনে রাখা ভালো।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক  এ সিদ্ধান্ত ভোটার তালিকায় কারচুপির সুযোগ তৈরি করবে বলে মনে করেন বদিউল আলম মজুমদার। ২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা নির্ভুল ও স্বচ্ছ করার উদ্যোগ নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান থেকে আবার নির্বাহী বিভাগে স্থানান্তর হলে সন্দেহ ও অবিশ্বাস বাড়বে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা। তোফায়েল আহমেদ জনগণের হয়রানি বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এরই মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে যাচাই-বাছাইয়ের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। এবার এনআইডি সেবার নামে নতুন করে হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। তার মতে, এটি একটি নতুন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া উচিত। তোফায়েল আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনশৃঙ্খলা দেখবে। তাদের দ্বারা নিবন্ধন করা যাবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়া মানে পুলিশের কাছে যাওয়া। নাগরিকদের নিবন্ধনের বিষয়টি কেন পুলিশের কাছে যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

মাথা ঘামাতে চান না সিইসি : অন্যদিকে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে ইসি মাথা ঘামাবে না। ভোটার তালিকায় সরকারের হাত থাকলে উদ্যোগ নেওয়া হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকলে ইসি কথা বলবে বলেও জানান তিনি। জন্মের পর নাগরিকদের অনন্য পরিচয়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, এনআইডি প্রক্রিয়া হাতে নিলেও ভোটার তালিকা স্বচ্ছ থাকবে। এসব বিষয় ইসির কাজের মধ্যে পড়ে না। এটা রাষ্ট্র, সরকার ও সংসদের বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *