রপ্তানি আয়ে হোঁচট, রেমিটেন্সে ধাক্কা

0

রপ্তানি ও রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির দুই প্রধান প্রাণশক্তি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইতিবাচক প্রবণতার পর গত সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় হোঁচট খেয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশ কমেছে। আর একই মাসে রেমিটেন্স কমেছে ১১ শতাংশ। এমনকি সেপ্টেম্বরেও গত সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রপ্তানি কমার মূল কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এটি আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন ব্যাহত করেছে। জ্বালানির এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে খাদ্যপণ্যসহ সব পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এটি পোশাক সহ অন্যান্য পণ্যের জন্য প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহার ক্ষমতা হ্রাস করেছে। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক মাস ধরে রপ্তানি কমার আশঙ্কা করছেন অনেকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের দর নির্ধারণই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার প্রধান কারণ।

গত জুন থেকে রপ্তানি বৃদ্ধির হার কিছুটা কমতে শুরু করে। পরবর্তী দুই মাসেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ মাস পর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি আয় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখায়। এর আগে গত অর্থবছরের জুলাইয়ে রফতানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে ৩৯১  কোটি  ডলারের রপ্তানি হয়েছে। এই আয় আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। আর রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ শতাংশ কম। মাসে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২০ কোটি ডলার। গত মাসে পোশাক খাতের রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। ৩১৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৩৪২ কোটি ডলার।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, মন্দার যে আশঙ্কা তারা এত দিন ধরে তাঁরা করে আসছিলেন, সেপ্টেম্বরের রপ্তানির অঙ্কে তা প্রতিফলিত হয়েছে। রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটে। কাঁচামালের দাম বাড়ায় পোশাকের দাম বেড়েছে। কিন্তু অর্থনীতিতে প্রায় মন্দার কারণে ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা ও ভোগ ক্ষমতা কমে গেছে। ব্র্যান্ড এবং ক্রয় প্রতিষ্ঠানের স্টকে অবিক্রীত অন্যান্য পণ্য। এ কারণে তারা নতুন রপ্তানি আদেশ নিয়ে সতর্ক। এমনকি অনেক ক্রেতা তাদের রপ্তানি আদেশ আটকে রেখেছেন। এটি সামগ্রিকভাবে শিল্পের জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি। এ অবস্থা দ্রুত শেষ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমে গেলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের হিসাবে সামগ্রিক রপ্তানি এখনও ইতিবাচক প্রবণতায় রয়েছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অর্থবছরের তিন মাসে সামগ্রিক রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এ সময়ে মোট ১ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক শতাংশ কম। পোশাক ছাড়া অন্যান্য প্রধান পণ্যের মধ্যে কৃষিপণ্য, হিমায়িত মাছ এবং ওষুধের রপ্তানি কমেছে। পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও গার্হস্থ্য বস্ত্র পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে।

এদিকে, মার্কিন ডলারের মূল্য বৃদ্ধির পর রেমিটেন্সে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। গত মাসে, প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ১৫৪ কোটি ডলারের কম রেমিট করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী। ১ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ৫৯ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। অর্থাৎ দৈনিক গড় রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৭.৪৪ মিলিয়ন ডলার। এরপর ৯ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা কমে ৪১.২৮ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এর পরে ১৬ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ২৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলার এবং ২৩ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৭ কোটি ৪১ লাখ ডলার।

ব্যাংকাররা জানান, দর নির্ধারণের আগে ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রা প্রতিষ্ঠান থেকে ডলার কিনছিল ১১০ থেকে ১১৪ টাকা দরে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে গত ১১ সেপ্টেম্বর দর নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়। পরে রেমিট্যান্সের হার আরও কমিয়ে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। এতে করে তিনি প্রতি ডলারে তিন থেকে সাড়ে ছয় টাকা কম পাচ্ছেন কয়েকদিন আগেও। এতে করে অনেকেই হয়ত ব্যাংকিং চ্যানেলে না পাঠিয়ে হুন্ডিতে পাঠাচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *