নিরপেক্ষ আচরণের বার্তা যাবে মাঠ প্রশাসনের কাছে

0

জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ফেরাতে বড় ধরনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই অংশ হিসেবে সব ধরনের রাজনৈতিক হয়রানি বন্ধে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে নির্দেশনা আসছে। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক বিতর্কে থাকা এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক করতে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট দলগুলো জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগাম বার্তা দিতে আগামী শনিবার ঢাকার নির্বাচন ভবনে ৬৪ জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ দেশের অনেক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন ইসির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় বাকি। তবে শনিবারের বৈঠকে মাঠ প্রশাসনকে কড়া হুঁশিয়ারি দিতে চায় ইসি। ওই বৈঠকে দলগুলোর প্রতি নিরপেক্ষ আচরণের মাধ্যমে সব দলের জন্য সমান আচরণ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) তৈরির কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরির কাজ শুরু করেছেন কমিশনের সদস্যরা। ইসি কর্মকর্তারা এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করবেন।

ইসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১৭ অক্টোবর ৬১টি জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা ও ৫ নভেম্বর ফরিদপুরে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগে সাধারণত আইনশৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাঠ প্রশাসনকে বলা হয়েছে। তবে এবার সারাদেশের মাঠ প্রশাসনকে একযোগে আহ্বান করায় বৈঠক ভিন্ন মাত্রা নিয়েছে।

গতকাল ইসি কার্যালয়ের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী ৮ অক্টোবর শনিবার সকাল ১০টায় ঢাকায় নির্বাচন ভবনে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কমিশনার এবং পুলিশ সুপার। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার, ইসি কার্যালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আনিচুর রহমান বলেন, ইসির আগে জেলা পরিষদসহ দুটি উপনির্বাচন রয়েছে। এরপর রংপুরসহ একাধিক সিটি করপোরেশন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে এ বৈঠকে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিসহ সব বিষয়ে মাঠ প্রশাসনের পরামর্শ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হবে। সব ভোট নিয়ে এখন মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক প্রয়োজন বলে মনে করছে ইসি। তাই এই সভা শুধু জেলা পরিষদ ভোটে সীমাবদ্ধ নয়; সবকিছু নিয়েই এখানে আলোচনা করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার আনিচুর রহমান বলেন, কমিশনের সদস্যরা নিজেরা বসে আলোচনা চূড়ান্ত করবেন। ইসি মনে করছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা প্রয়োজন, এখন মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও সমান মনোযোগ দেওয়া। নির্বাচন কমিশনের এই সদস্য আরও বলেন, বৈঠকে ইসির ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন নিয়ে আলোচনা হবে।

ইসির ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯। ফলে আগামী ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ সালের মধ্যে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে এবং সরকার গঠন করে। তবে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারণ ওই নির্বাচনের ফলাফল ছিল সম্পূর্ণ একতরফা। এরপর বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানায়। বিএনপির ঘোষণা অনুযায়ী, দলীয় সরকারের অধীনে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না তারা। অন্যদিকে, বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল এবং বিগত তিনটি নির্বাচনে (নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ) আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ শরিক দল জাতীয় পার্টিও বলছে, বর্তমান সংসদে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তারা সন্দিহান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *