গফরগাঁওয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা।পোকার পেটে ৪ কোটি টাকার বই

0

অব্যবস্থাপনা, মানসম্মত পাঠদানের অভাব, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে গফরগাঁও উপজেলার অর্ধশতাধিক বিদ্যালয়ের অবস্থা শোচনীয়।

সরকারি বিনামূল্যের বই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বছরের আট মাস পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়নি। বই হয়ে উঠেছে উইপোকার খাদ্য। সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হলেও সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথাব্যথা নেই। গফরগাঁও উপজেলার লঙ্গাইর, পাইথল, নিগুয়ারী, টাঙ্গাব, চরআলগী ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে। বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে অনেক বই পড়ে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষকরা এড়িয়ে যান।

লঙ্গাইর সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, অফিসে একাধিক প্লাস্টিকের ব্যাগে শতাধিক বিনামূল্যের বই পড়ে আছে। বইয়ের মধ্যে পোকা ধরা পড়ে। জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক রায়হানা নাহার বলেন, অতিরিক্ত বই বস্তায় রাখা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বই তুলে নেওয়ার পর উদ্বৃত্ত থাকে কীভাবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে ভর্তি না হওয়ায় অতিরিক্ত বই রয়ে গেছে।

লঙ্গাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষেও বই পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এর কারণ সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন বলেন, জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের চেয়ে কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। তাই কিছু বই পড়া হয়।

চড়ামচালন্দ কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে কয়েকশ বই পড়ে আছে। এত বই কেন এমন প্রশ্নের জবাবে সহকারী শিক্ষক ফরিদা আক্তার বলেন, যারা স্কুলে ভর্তি হয়েছে তাদেরই বই দেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিসেম্বরের শেষ ১০ দিন প্রতিটি বিদ্যালয়ের ক্রেচমেন্ট এলাকায় (শিক্ষা অফিস কর্তৃক নির্ধারিত এলাকা) শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জরিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করেন। কোন শিক্ষার্থী কোন স্কুলে পড়াশোনা করে তা নির্দিষ্ট করার জন্য একটি মনিটরিং বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এভাবে শিক্ষকরা দাবিপত্র তৈরি করে উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দেন। তারা উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে চাহিদাপত্রসহ বিনামূল্যে বই সংগ্রহ করেন। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বছরের প্রথম দিনে বই বিতরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

চলতি শিক্ষাবর্ষে গফরগাঁও উপজেলায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৩ হাজার ৮৩৯ জন। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ৬ হাজার ১৩২ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৭ হাজার ২১০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৭ হাজার ৬৭১ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৭ হাজার ৯১১ জন। চতুর্থ শ্রেণিতে ৭ হাজার ৬৮৯ জন, পঞ্চম শ্রেণিতে ৭ হাজার ২২৬ জন। কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষে ৮৫ হাজার ৩০০ সেট বই বিতরণ করেছে শিক্ষা অফিস। যার কারণে ৪১ হাজার ৪৬১ সেট বই অতিরিক্ত। স্থানীয় শিক্ষা অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার সহায়তায় শিক্ষকরা অতিরিক্ত চাহিদাপত্র দিয়ে বই সংগ্রহ করেন। বিতরণের পর অতিরিক্ত বই প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ।

লংগাই গ্রামের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন ‘শিশুদের উন্নত শিক্ষার জন্য কেজি (কিন্ডারগার্টেন) স্কুলে পড়ানো হয়। আর উপবৃত্তির জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করি।

চড়ামচালন্দ কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিফাত, সাদিম, বায়েজিৎ, রিফাত জানান, তারা কেজি স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও যায়।

গফরগাঁও বই বিক্রেতা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল মুনসুর জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অব্যবহৃত ৪১ হাজার সেটের মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা।

বই বিতরণের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সবুজ মিয়া জানান, শিক্ষকদের চাহিদাপত্র অনুযায়ী বই সংগ্রহ করে বিতরণ করা হয়।

শিক্ষার্থী জরিপের বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল মালিক বলেন, শিক্ষকদের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী শিক্ষা অফিস বই সংগ্রহ করে। বিভিন্ন স্কুলে পড়ে থাকা অতিরিক্ত বই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বছর শেষে সরকারি দরপত্রের মাধ্যমে এগুলো ফেরত দিয়ে বিক্রি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *