সম্ভাবনা।ভেনামি চিংড়িতে আশার আলো

0

খুলনার পাইকগাছায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের লোনা পানি কেন্দ্রে দুই বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষ শুরু হয়। গত ৬ আগস্ট দ্বিতীয় রাউন্ডে রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হয়। রপ্তানিকারকরা অপেক্ষায় আছেন। তারা বলছেন, ভেনামি চিংড়ি বাণিজ্যিকভাবে চাষের অনুমতি পেলে কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড উৎপাদন সম্ভব হবে। রপ্তানি খাতে পণ্যের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আসবে।

একসময় দেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি ছিল হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ। চিংড়ি রপ্তানির ৮০% ছিল খুলনা অঞ্চলের মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা থেকে। এখন এই অবস্থান নেমে এসেছে সপ্তম স্থানে। গত সাত বছরে রপ্তানি কমেছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এর জন্য কাঁচামালের ঘাটতিকে দায়ী করছেন রপ্তানিকারকরা। চিংড়ির অভাবে দেশের কারখানাগুলো তাদের ক্ষমতার ৭০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছে না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ভেনামি চিংড়ির বৈশ্বিক চাহিদা। ভেনামি চিংড়ি আমাদের বাগদা ও গলদা থেকে অর্ধেক দামে পাওয়া যাচ্ছে। ছোট সাইজের কারণে অল্প কিছু কিনলেও সংখ্যায় অনেক। এসব সুবিধার কথা বিবেচনা করে গত কয়েক বছরে ভেনামিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে আমদানিকারক দেশগুলো। তবে পরীক্ষামূলক চাষে সাড়া ফেলেছে ভেনামি।

চিংড়ি চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, ভেনামির উৎপাদন প্রক্রিয়া আধা-নিবিড় পদ্ধতির মতোই। তবে মাত্র তিন মাসে একর প্রতি উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার কেজি। সময় কম লাগে বলে খাবারের খরচও কম। বিদ্যুৎসহ আনুষঙ্গিক খরচও কম। গলদা ও ব্যাগের সমান বিনিয়োগে দ্বিগুণ উৎপাদন পাওয়া যায়। এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চাষের দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দেশের পরিবেশে বিদেশি চিংড়ির প্রভাবের আশঙ্কায় সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। ২০১৮ সালের এক পর্যায়ে, সরকার ভেনামির প্রথম পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি দেয়। গত বছরের ৩১ মার্চ খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ডিস্যালিনেশন সেন্টারে ভেনামির ছানা অবমুক্ত করা হয়। ওই বছরের ১ জুলাই দেখা যায়, একরে ৪ হাজার ১০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। এরপর ৬ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় ভেনামি উত্তোলনে দেখা যায়, প্রতি একরে ৪ হাজার ৪৪৫ কেজি ভেনামি উৎপাদন হয়েছে। চিংড়ি মারা যাওয়ার হারও আগের তুলনায় অনেক কম।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চিংড়ি রপ্তানিকারক মডার্ন সি ফুডের চেয়ারম্যান রেজাউল হক বলেন, ভেনামি ও বাগদা স্বাদে প্রায় একই রকম। কিন্তু ইউরোপের বাজারে, যেখানে বাগদা প্রতি কেজি ৭ ডলার, ভেনামির দাম সাড়ে ৩।

অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সবাই কম দামে বেশি খাবারের দিকে ঝুঁকছে। দামের পাশাপাশি উৎপাদন কম হওয়ায় বাগদা ও গলদায় আমরা পিছিয়ে আছি। বৈশ্বিক বাজারে টিকে থাকতে ভেনামির বাণিজ্যিক চাষের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, বিশ্বের মোট চিংড়ি রপ্তানির ৭৭ শতাংশই ভেনামি। আমরা আশা করি সরকার শীঘ্রই বাণিজ্যিক চাষের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের লবণাক্ত পানি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. লতিফুল ইসলাম বলেন, ভেনামির ফোয়াল, খাবার, ওষুধসহ সবকিছুই আমদানি নির্ভর। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি যে বৈচিত্রটি আমাদের পরিবেশের সাথে কতটা উপযুক্ত। ফলে ভেনামি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসার সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, কেন্দ্রের সংরক্ষিত পুকুরে ভেনামির চাষ হচ্ছে। খোলা পরিবেশে অন্যান্য প্রজাতির সাথে এটি চাষের প্রভাব পরীক্ষা করা হবে। সেই ফলাফল দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *