আওয়ামী লীগে বাদ যাচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী-এমপি, বিদ্রোহী
জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী রয়েছে। সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের পাশাপাশি দলের জেলা-উপজেলা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারাও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।
নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী ১১ জন প্রশাসকের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তালিকায় কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্যের পাশাপাশি দুই কেন্দ্রীয় নেতার নাম রয়েছে যারা জেলা পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য, সৎ ও দক্ষ নেতা। তবে তাদের কারো নাম সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকলেও তারা প্রার্থী হবেন না।
এ অবস্থায় আগামীকাল রোববার থেকে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ফরম সংগ্রহ করে জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। দলের মনোনয়ন পাবেন। সেই সঙ্গে বিগত নির্বাচনে বিজয়ী দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্মূল করা হবে। তা ছাড়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মেয়াদে নানা কারণে বিতর্কিত নেতাদের মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সব মিলিয়ে চেয়ারম্যান পদে অনেক নতুন মুখ থাকবে।
সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এই নির্বাচনে ভোটার। এদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ নেতা। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যরা তাদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। এ কারণে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন।
তবে কয়েকটি জেলায় বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ ও বাংলাদেশ জাসদের প্রার্থীরাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত হলে পঞ্চগড় বিএনপির সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ও দলের তেঁতুলিয়া উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব রেজাউল করিম শাহীন নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও জেলা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি গাইবান্ধার বর্তমান প্রশাসক। গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে জয়ী হন। চট্টগ্রামে সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব হোসেনকে প্রার্থী করার চেষ্টা চলছে। কুষ্টিয়ায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন। পঞ্চগড় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আল আমিন।
২০১১ সালের ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ কার্যকর হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের এমন সিনিয়র নেতারা যারা মন্ত্রী বা এমপি হতে পারেননি, তাদের জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা প্রায় পাঁচ বছর এই দায়িত্ব পালন করেন। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পায়।
৬১টি জেলা পরিষদের দ্বিতীয় নির্বাচন আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ৬৩ হাজারের বেশি নির্বাচিত প্রতিনিধি ইভিএম (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) মাধ্যমে ভোট দেবেন। এর আগে নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীরা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন এবং ২৫ সেপ্টেম্বর প্রত্যাহার করতে পারবেন।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করছে। দলীয় মনোনয়নের দৌড়ঝাঁপ। ‘মনোনয়ন পেলে জয় খুবই সম্ভব’- এমন আশায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। যোগাযোগ বেড়েছে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে। ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা। তবে দলীয় মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আগাম প্রস্তুতি নিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ।
রংপুর বিভাগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী
সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছেন পঞ্চগড়ের প্রশাসক আনোয়ার সাদাত সম্রাট, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা সরোয়ার হোসেন ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান শেখ মিলন। জেলা সহ-সভাপতি আবু তৈয়বুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু সারোয়ার বকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম পল্লব, পঞ্চগড় সদর উপজেলা সভাপতি আমিরুল ইসলাম, দেবীগঞ্জ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হাসনাত জামান চৌধুরী জজ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন ও সাবেক কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ সম্পাদক স্থানীয়ভাবে আলোচনায় রয়েছে। শাহনেওয়াজ প্রধান শুভ।
জাসদের এমরান আল আমিনও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে পঞ্চগড় বিএনপির সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ও তেঁতুলিয়া উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব রেজাউল করিম শাহীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছেন প্রশাসক সাদেক কোরায়শী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তোজাম্মেল হক মঞ্জু।
সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক আজিজুল ইমাম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের দুই সহ-সভাপতি ফরিদুল ইসলাম ও বজলুল হক। স্থানীয়ভাবে আলোচনায় রয়েছেন বিরল উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের দুই সহ-সভাপতি আলতাফুজ্জামান মিতা, আবুল কালাম আজাদ, দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল ও মির্জা আশফাক হোসেন।