রওশন এরশাদ কাউন্সিল ডেকেছেন।জাপায় ফের দেবর-ভাবীর দ্বন্দ্ব
থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির (জাপা) কমিটি ভেঙে দিয়ে বুধবার এক চিঠির মাধ্যমে কাউন্সিল আহ্বান করেছেন। নিজেকে পরিষদের প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ঘোষণা করেন। আর দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে ‘বাদ’ দেওয়া হয়েছে।
জাপা এক বিবৃতিতে বলেছে, দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সম্মেলন ডেকে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। তার চিঠি বেআইনি, অনৈতিক ও অসাংবিধানিক।
থাইল্যান্ড থেকে পাঠানো এক চিঠিতে রওশন এরশাদ জাপা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও সালমা ইসলামকে যুগ্ম পদ দেওয়া হয়েছে। – প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক। তিনি তার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহকে সদস্য সচিব করেন।
রামনার ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ার্সে ২৬ নভেম্বর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক বলেন, প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদটি অলংকারিক। রওশন এরশাদের কাউন্সিল আহ্বানের ক্ষমতা নেই। তিনি কারও সঙ্গে কথা না বলে সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতিদের যুগ্ম আহ্বায়ক ঘোষণা করেন। যা ভিত্তিহীন। রওশন এরশাদের অসুস্থতা উপলক্ষে সাবেক ও বহিষ্কৃত কয়েকজন নেতা তাকে নিয়ে অনেক কিছুই করছেন। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ।
বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বুধবার থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নীতি আদর্শ থেকে দলকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন জিএম কাদের। এ কারণে দলের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে রওশন এরশাদ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আহ্বায়ক কমিটি করে কাউন্সিল আহ্বান করেন।
রওশন এরশাদ স্বাক্ষরিত তিন পৃষ্ঠার চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টি এরশাদের আদর্শ ত্যাগ করে ভুল পথে চলেছে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয় জাপা। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মহাজোটের শরিক হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। জাপার সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এ অর্জনে অংশ নিতে অনীহা দেখিয়েছে জাপার শীর্ষ নেতৃত্ব। আবারও, জাপা সীমান্ত হত্যা বন্ধ, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা এবং রাসুল (সা.)-কে অবমাননার বিষয়ে সোচ্চার নয়।
রওশন বলেন, রাজনীতিতে জাপার অবস্থান দুর্বল। ত্যাগী নেতাদের রাখা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে পদ দেওয়া হচ্ছে। আগামী নির্বাচনের জন্য লড়াকু কর্মী বাহিনী গড়ে তুলতে প্রয়োজন নতুন নেতৃত্ব। বিভিন্ন দলে চলে যাওয়া নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে এনে বিএনপি, জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জাপাকে শক্তিশালী করতে হবে।
করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন রওশন। ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের আগস্ট থেকে তিন মাস ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার পর ৫ নভেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৮শে জুন ব্যাংকক থেকে পার্লামেন্টে যোগদান করেন। ২ জুলাই তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। জিএম ক্যাডাররা তাতে যাননি। বিনিময়ে জিএম কাদের ও তার অনুগতদের সঙ্গে দেখা করেননি রওশন। তিনি অভিযোগ করেন, অসুস্থতার সময় দলের কেউ তাকে দেখাশোনা করেননি। ৫ জুলাই ফের ব্যাংকক যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে ভাবী রওশনকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন দেবর জিএম কাদের।