ডলার সংকট কাটছে না, খোলাবাজারে ১১২ টাকা
ডলারের বাজারের অস্থিরতা কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন আরও তৎপর। বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং আমদানি কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডলার সংকট কাটেনি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকও বাজারে বিক্রি বাড়িয়েছে। এর ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে ৩৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এদিকে ব্যাংক মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলে খোলাবাজারে আবারও ডলারের দর বেড়েছে। গতকাল দর বেড়েছে ১১২ টাকা। এদিকে বিদেশ ভ্রমণের পর ব্যক্তিগত পর্যায়ে ১০ হাজার ডলারের বেশি না রাখতে গতকাল সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, আমদানি ঋণ পরিশোধে সহায়তা করতে গতকাল তিনটি সরকারি ব্যাংকের কাছে আরও ৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের দুই দিনে ৩১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের রেকর্ড বিক্রি হয়েছে। এ বিষয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ২৪৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরে বিক্রি হয়েছে ৭৬২ মিলিয়ন ১৭ মিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি বিক্রি করতে এত ডলারের প্রয়োজন আগে কখনো হয়নি। ডলার বিক্রির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। গতকাল রিজার্ভ ছিল ৩৯.৬ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের আগস্টে যা ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
খোলাবাজারে দাম অনেক বেড়ে যাওয়ার পর ডলারের দাম ১০৮ টাকার নিচে নেমে গেছে। তবে গত দুই দিনে তা আবার বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ১১২ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত। ১০ আগস্ট, এটি সর্বোচ্চ রুপি পৌঁছেছে। ১১৯ এই বছরের শুরুতে, এটি প্রায় ৯০ টাকা ছিল। ব্যাংকের পাশাপাশি খোলা বাজারে ডলারের দর স্বাভাবিক করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মানি চেঞ্জাররা যে হারে ডলার কেনেন তার চেয়ে দেড় টাকার বেশি চার্জ না নিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শনের ভিত্তিতে ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে তিরস্কার করা হয়েছে, ৫টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে এবং ২৭টি প্রতিষ্ঠানের হিসাব তলব করা হয়েছে। ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন শাখার পাশাপাশি কিছু নন-এডি শাখা থেকে ডলার বিক্রির অনুমতি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে এক মানি চেঞ্জারের বিক্রয়কর্মী বলেন, চাহিদা বাড়লেও সরবরাহের অভাবে আবারও বাড়ছে ডলারের দাম। বুধবার তারা ডলার কিনেছেন ১১১ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১১২ টাকায়। আর বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১১২ টাকা ২০ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের পর আগস্টেও এলসি খোলার হার কমেছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ৫.৩২ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। আর নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৯৪ মিলিয়ন ডলার। জুলাই ছিল আর্থিক বছরের প্রথম মাস যেখানে ৬২২ কোটি মার্কিন ডলারের এলসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং USD ৭৪৩ কোটির এলসি নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। এসব কারণে আমদানিতে ডলারের মূল্য কমেছে। গতকাল আমদানি মূল্য ছিল ১০৬ টাকার নিচে। রপ্তানি বিল এখন প্রায় ১০ টাকা। আর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের হারও কিছুটা কমেছে।
একজন ব্যাংকার বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগ, বিশেষ করে প্রতিটি এলসির ডাটা বিশ্লেষণ করে ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি এবং কিছু পণ্যে ৭৫ থেকে ১০০ শতাংশ এলসি মার্জিন নির্ধারণ করে ঋণ বন্ধের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তবে কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় বাজারে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষ করে অত্যন্ত লাভজনক ৬টি ব্যাংকের এমডিদের তিরস্কার করা হয় এবং এসব ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসারণ করা হয়।
১০.০০০ ডলারের বেশি হলে বিক্রির নির্দেশনা: বিদেশ ভ্রমণের পর একজন বাংলাদেশি ১০.০০০ ডলার পর্যন্ত রাখতে পারেন। এর বেশি কারও কাছে থাকলে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংক বা মানি চেঞ্জারের কাছে বিক্রি করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেউ বিক্রি না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে নিজের কাছে রাখা বেআইনি। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে এলে বা দেশে অবস্থানকারী ব্যক্তি বিদেশ ভ্রমণ থেকে ফেরার সময় ডলার রাখার সুযোগ পান। দেখা গেল, মিটিং-সেমিনারে যাওয়ার সময় বা অন্য কোনো কারণে কেউ হয়তো তার সঙ্গে ২ হাজার ডলার নিয়ে গেছে। দেশে এসে হয়তো ১৫ হাজার ডলার সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। সেক্ষেত্রে তার কাছে ১০ হাজার ডলার দীর্ঘদিন রাখতে পারবেন। এর বেশির ভাগই বিক্রি করতে হবে বা এক মাসের মধ্যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে। কেউ না দিলে তা বাতিল হয়ে যাবে।