পুলিশের মাসোহারায় অবৈধ যানবাহন ‘বৈধ’।চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অত্যন্ত ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। এই রাস্তায় তিন চাকার গাড়ি নিষিদ্ধ হলেও প্রতিদিনের ছবি দেখে বোঝার উপায় নেই- এটা কী ধরনের যানের জন্য তৈরি। ৬৬ কিলোমিটার সড়কে নছিমন-করিমন, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা জড়িত। স্টেশনটি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে, যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। থ্রি-হুইলারগুলো সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ পথ আটকে রয়েছে। সেগুলোতে ইচ্ছেমতো চলাচল করছে যাত্রীরা। এগুলো হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে না। কারণ অটোরিকশা একটি সমৃদ্ধ ব্যবসা। প্রশাসনকে ম্যানেজ করার নামে মালিক-শ্রমিকদের বিভিন্ন সমিতি ও সংগঠন কমিশন নেয়। পুলিশ মাসোহারা পায়।
কর্ণফুলী উপজেলার মাইজারটেক থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত মহাসড়কের ৬৬ কিলোমিটার অবৈধ যানবাহনের দখলে। পথে তাদের সহিংসতা এতটাই যে তারা অন্যদের পাশে দাঁড়াতে চায় না। তাদের জন্য বাস-ট্রাকসহ ভারী যানবাহনকে দাঁড়াতে হয়। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি বড় গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে প্রায়ই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের মধ্যে নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়ছে। পুলিশ সুযোগ দিতে গিয়ে অন্যকে হয়রানি করায় বৈধ যানবাহন মালিক-শ্রমিকদের ক্ষোভ বাড়ছে।
২০১৫ সালে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় দেশের ২২টি মহাসড়কে সব ধরনের অটোরিকশা নিষিদ্ধ করেছিল। বেশিরভাগ দুর্ঘটনাকে দায়ী করে হাইকোর্ট বিভিন্ন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং হাইওয়ে পুলিশকে এসব যানবাহন বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপরও সড়কের চিত্র পাল্টায়নি। এটি ভারী যানবাহনের গতি কমিয়ে দেয়, দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয়; মইজ্জারটেক থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত মহাসড়কের অন্তত ২০টি জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অটোরিকশা, টেম্পো ও ট্রাক-পিকআপ স্ট্যান্ড। প্রবেশদ্বার মইজ্জারটেক মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে সিএনজি অটোরিকশার অবৈধ স্টেশন রয়েছে। এ ছাড়া চালকরা ওই স্থানে বাস, ট্রাক, লেগুনা ও সিএনজি থামিয়ে যাত্রী স্থানান্তর করে। কিন্তু কেউ দেখে না।
২৮ আগস্ট সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লোহাগড়ার মাইজারটেক মোড় থেকে আমিরাবাদ পর্যন্ত মহাসড়কে দেখা যায়, অসংখ্য ফুট-চালিত ও ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, নছিমন-করিমন-ভাটাভ অবাধে চলাচল করছে। এই পথ. কোথাও উল্টো দিকে চলছিল। এ ছাড়া কর্ণফুলীর শিকলবাহা ক্রসিং ও মাইজরটেক এলাকা, কমলমুন্সি হাট, বাসস্টেশন, ডাকবাঙ্গালোর মোড়, থানার মোড়, মুন্সেফবাজার, শান্তিরহাট, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার দোহাজারী ও দেওয়ানহাট এলাকায় সড়কের দুই পাশে অটোরিকশা দাঁড়িয়ে আছে। , গাছবাড়িয়া কলেজ বাজার, খানহাট বাজার ও রওশনহাট। একই কারণে সাতকানিয়ার কেরানীহাট এলাকায় লাগাতার যানজট লেগেই আছে।
জানা গেছে, উপজেলার কামালমুন্সি হাট থেকে শান্তিরহাট পর্যন্ত সড়কে ছয় মাসে ৪০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন। এর মধ্যে ১১ জুলাই পটিয়ার ভায়ারদীঘি এলাকায় বাস-সিএনজি ও অটোরিকশার সংঘর্ষে সাতজন নিহত ও ২০ জন আহত হন।এক সপ্তাহের মধ্যে ১৯ জুলাই তেলবাহী ট্যাংকারের ধাক্কায় দুই সাইকেল আরোহী নিহত হন। একই স্থানে.
হানিফ পরিবহনের চালক মো. রাশেদ বলেন, এসব অবৈধ যানবাহনের কারণে ধীরগতিতে চলাচল করতে হচ্ছে। সাতকানিয়ার কেরানীহাট জংশন থেকে কর্ণফুলী টোল প্লাজা পর্যন্ত এসব যানবাহন উল্টো পথে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হয়। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়।
সাতকানিয়ার কেরচিয়া গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল আলম বলেন, মহাসড়কে ছোট যানবাহনের কারণে আমরা সব সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকি। রাস্তার ধারে হাঁটতেও ভয় লাগে- গাড়ি কাউকে ধাক্কা দিলে! গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কের চিত্র দেখেও না দেখার ভান করছেন প্রশাসনের লোকজন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ বলেন, মানুষের প্রয়োজনে অটোরিকশা চলে। এসব যানবাহন ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন মহাসড়কের দুই পাশের বাসিন্দারা। তাদের অপসারণ করা ঠিক হবে না। মহাসড়কের পাশে তাদের জন্য আলাদা লেন করতে হবে।
ইব্রাহিম নামের এক অটোরিকশা চালক বলেন, পেটের দায়ে তিনি রাস্তায় নেমেছেন। বিকল্প ব্যবস্থা না করে নিষিদ্ধ করা ঠিক হবে না। কিন্তু মাঝে মাঝে পুলিশ আমাদের বাধা দেয়; পরে সমিতির নেতারা পুলিশকে ম্যানেজ করে।
এ মহাসড়কে বৈধ যানবাহনের চেয়ে অবৈধ যানের সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছেন পরিবহন কর্মকর্তারা। এসব গাড়ি রাস্তা থেকে নামানোর জন্য মালিকরা পুলিশকে টাকা দেন। বেশিরভাগ অটোরিকশায় পুলিশকে মাসিক টাকা দিতে হয়। এ কারণে পুলিশও এসব যানবাহনকে হয়রানি করে না; মামলাও দেয় না।
পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আমার দুটি গাড়ি ও একটি হায়স চলছে। কাগজপত্র সঠিক থাকলেও পুলিশ নানাভাবে হয়রানি করে; অকারণে অনেকক্ষণ ধরেও রাখে।