নতুন আলামতে তদন্তের মোড়।সিলেট ও ​​গাজীপুরে রহস্যজনকভাবে ৫ জনের মৃত্যু

0

সিলেটের ওসমানীনগর ও গাজীপুরে এক মাসের মধ্যে পৃথক ঘটনায় পাঁচজনের রহস্যজনক মৃত্যু পুলিশসহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থাকে উদ্বিগ্ন করেছে। দুটি ঘটনায়ই এখন পর্যন্ত অপরাধ প্রত্যাখ্যান করার মতো কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে মৃত্যুর ধরণ এবং নতুন কিছু ক্লু নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে তদন্তকারীদের মনে। বাড়ির বাইরে এটি নতুন মৃত্যুর ফাঁদ কিনা তা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছে পুলিশ।

দুই ঘটনার তদন্তে জড়িত পুলিশের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, সিলেটে তিন প্রবাসীর মৃত্যু একটি ‘খুন’ হতে পারে; এ বিষয়ে তাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ নেই।

সিলেটের ঘটনার তদন্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধানে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশ ইতোমধ্যে প্রবাসীর বাড়ি থেকে জেনারেটরের ধোঁয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে।

কেন এমন ধোঁয়া পরীক্ষা করা হচ্ছে জানতে চাইলে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন বলেন, ঘটনার রাতে ওই বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। এরপর তারা ঘরের সব দরজা-জানালা বন্ধ করে চায়নিজ জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বন্ধ ঘরে জেনারেটর থেকে নির্গত কোনো বিষাক্ত গ্যাসের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার পর অবশিষ্ট জ্বালানি দিয়ে জেনারেটর চালানো শুরু করে আবার কৃত্রিমভাবে ঘরের ভেতরে ধোঁয়া তৈরি করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, ‘ময়নাতদন্ত ও ভিসেরার রিপোর্ট এলেও বোঝা যাবে কেন তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা শিগগিরই ওই দুটি প্রতিবেদন পাব। এ ছাড়া বাড়ির ভেতরের খাবারও পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য। সম্প্রতি গাজীপুরে প্রাইভেটকারে দুই শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকারের এসি থেকে গ্যাসের বিষক্রিয়ায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঘটনা দুটি তদন্ত করছে।

পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বলেছেন, সিলেট ও ​​গাজীপুরের দুটি ঘটনা তদন্ত সংস্থাকে নতুন করে ভাবার পথ দিয়েছে। নিহতের হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত শুরু হলেও আরও কয়েকটি বিষয় আমলে নেওয়া হচ্ছে। বিষক্রিয়ার আশঙ্কায় চুল পড়া বিশ্লেষণের জন্য বিশেষজ্ঞদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। বিষ মেশানো হলেও এর পেছনে মানুষের হাত ছিল কি না সেটাও দেখতে হবে। তিনি বলেন, দুটি ঘটনার বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো মন্তব্য করতে এখনো কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, বিআরটিএর মাধ্যমে যানবাহনের বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। গাড়ির ভেতরে গ্যাস থাকায় প্রাথমিকভাবে কিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে। এ কারণে ওই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে কি না, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও ভিসেরা প্রতিবেদন পেলে স্পষ্ট হওয়া যাবে। গাড়ির এসি এবং গ্যাসের আরও বিস্তারিত পরীক্ষা চলছে।

আরেক কর্মকর্তা জানান, গাজীপুরের ঘটনায় শিক্ষক কে এম জিয়াউর রহমানের নিথর দেহ তার প্রাইভেটকারের চালকের আসনে ছিল। তার হাত ছিল স্টিয়ারিং হুইলে। তার পাশের সিটে তার স্ত্রী মোসাম্মৎ মাহমুদা আক্তার জলির নিথর দেহ ছিল। তদন্তকারীদের মতে, দেশে এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রযুক্তি পাওয়া যায়নি, যার মাধ্যমে চলন্ত প্রাইভেটকারের ভেতরে কাউকে হত্যা করা যায়। তাদের শরীরে বাহ্যিক কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে বড় ধরনের কোনো শত্রুতার তথ্য পুলিশের কাছে আসেনি। প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে টাকাসহ কোনো গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র খোয়া যায়নি।

গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে শিক্ষক দম্পতির মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে তাদের উভয়ের ফুসফুস ও কিডনিতে রক্ত ​​জমাট বেঁধেছে। এটা ফুড পয়জনিং বা অন্যান্য কারণেও হতে পারে। তাদের লাশের বিভিন্ন নমুনা ঢাকার সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, দেশে এসি থেকে গ্যাসের বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর নজির রয়েছে। ২০ আগস্ট ঝালকাঠির রাজাপুরে মুদি দোকানদার ফোরকান হাওলাদার ও তার স্ত্রী মাহিনুর বেগম মারা যান।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুর্ঘটনার পর রাসায়নিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে ডিএমপির বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল। এই গ্রুপের প্রধান এডিসি রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, গাড়ির নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকলে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হতে পারে। ঘরটি সিল করে দিলেও সেখানে কার্বন মনোক্সাইড ও অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস জমতে পারে। এর আগেও বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যুর একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহিনুর ইসলাম বলেন, গাজীপুরের ক্ষেত্রে গাড়ির রেফ্রিজারেন্ট পরীক্ষা করা যায়। কোনো জায়গায় অক্সিজেন কম থাকলে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার কেউ সোম রেখে গেছে কিনা সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *