ঋণ আত্মসাৎ।পিকে হালদারের সহযোগী দুই প্রবাসী মেয়ে গ্রেফতার
বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের সহযোগী খবির উদ্দিনের দুই মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার ভোরে দেশ ছাড়ার চেষ্টাকালে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এর যৌথ দল এ অভিযান পরিচালনা করে।
তারা হলেন পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির খেলাপি শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ। বাবার মাধ্যমে ৬৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক খবির উদ্দিনের মাধ্যমে তার দুই মেয়ে কোম্পানি থেকে ঋণ নেন। তারা কানাডিয়ান প্রবাসী। প্রায় দেড় শতাব্দী সেখানে অবস্থান করে শারমিন ৩১ কোটি ও তানিয়া ৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। গত ২৮ জুলাই তারা বাংলাদেশে আসেন। আজ (বুধবার) গোপনে কানাডা যাওয়ার সময় তাদের আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য দিয়েছে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আর্থিক খাতে আলোচিত নাম পিকে হালদার। তিনি দেশের আর্থিক খাতের শীর্ষ দখলকারী এবং খেলাপিদের একজন। ১৪ মে হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ভারতীয় গোয়েন্দারা তাকে গ্রেপ্তার করে। বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিকে ২৪ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন দেয়। পরবর্তীকালে বিভিন্ন অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির কারণে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিকে ২০১৯ সালে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এদিকে, বিজ্ঞ আদালত পিকে-এর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। হালদারসহ বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ছয় হাজার ব্যক্তি/শ্রেণীর আমানতকারী রয়েছে। বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আটকে গেছে। এই অর্থের পুরোটাই জনগণের ঋণ হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাওনা। এ অর্থের একটি বড় অংশ কোম্পানির পরিচালকরা বিভিন্ন নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন।
তিনি বলেন, পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক খবির উদ্দিন। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ সময় তিনি পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাকে এই পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
র্যাবের এই মুখপাত্র জানান, চলতি বছরের ৭ মার্চ প্রতিষ্ঠানের খেলাপিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তারা আদালতে হাজির না হওয়ায় গত ১৯ এপ্রিল আদালত তাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পরে র্যাব জানতে পারে প্রতিষ্ঠানটির দুই খেলাপি বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। ফলে তাদের ধরতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এ কারণে তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে।
এর আগে গত বছরের ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে পিকে হালদারের বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই বছরের ১৬ মার্চ বিকেলে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে পিকে হালদারের আরেক বান্ধবী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাইকে গ্রেপ্তার করা হয়।