গরিব মানুষ কম খাচ্ছে

0

কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনের বিপরীতে ফুটপাতে আটার রুটি, সবজি ও ডিম ভাজা বিক্রি করেন রুবেল হোসেন। রিকশাচালক, পাশের কারখানার শ্রমিকরা তার খরিদ্দার। গত বৃহস্পতিবার সকালে রুবেল দোকান খুললে ঝুড়িতে ১৭টি ডিম ছিল। সারাদিনে ১১টি ভাজা ডিম বিক্রি হয়েছে। রুবেল জানায়, তার দোকানের কাস্টমাররা গরীব। ২৫ টাকায় ভাজা খাওয়ার তাদের সামর্থ্য নয়। তাই বিক্রি কমে গেছে।

রুবেল জানান, ছয় মাস আগে ২৪ কেজি আটার বস্তার দাম ছিল ৬৮০ টাকা। তা এখন ১ হাজার ২৫০ টাকা। প্রতি কেজি দাম ৫২ টাকা। কিন্তু আগে প্রতিটি রুটি বিক্রি করতেন ১০ টাকায়, এখনো একই দাম। এর রহস্য ব্যাখ্যা করে রুবেল বলেন, আগে তিনি এক কেজি আটা থেকে ছয়-সাতটি রুটি তৈরি করতেন। এখন বানান ১০-১২টি রুটি তাও পাতলা।

আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পরও রুবেলের দোকানে ক্রেতার দেখা মেলেনি। তিনি বলেন, আগে ক্রেতা দুই রুটি খেত, এখনো দুই রুটি খাচ্ছেনা গরিব মানুষ। আসলে আগের চেয়ে অর্ধেক খেয়ে দিন কাটাচ্ছে তারা।

এমনকি দুই মাস আগেও রুবেলের দোকানে বর্তমানের দ্বিগুণ আকারের একটি রোটি, ডিম ভাজাসহ নানা ধরনের সবজি পাওয়া যেত ৩৫ টাকায়। তিনি বলেন, এখন ভাজা ডিমের দাম ২৫ টাকা। গরিব মানুষ ডিম খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। বুধবার ৩০টি ডিম কিনছেন ৩৬০ টাকায়। বিক্রির দুই দিন পরেও কিছু অবশিষ্ট ছিল।

কারওয়ান বাজারের মাছ বাজারের ফুটপাতে চাল বিক্রি করছেন বরগুনার আল মামুন। এমনকি ভরদুপুরে বৃহস্পতিবারও তাঁর দোকানের বেঞ্চ ছিল খদ্দেরবিহীন।

দুপুরের খাবারের মেনু হল ভাত, পাঙ্গাস মাছের ঝোল ও সবজি দিয়ে কাই। রাইস প্লেট ১০ টাকা। এক টুকরো পাঙ্গাস ৩০ টাকা। মাঝারি পিস ৪০ টাকা। যেখানে মাছের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা। তাদের দাম বাড়েনি। শুধুমাত্র টুকরাগুলো রুটির মত আকারে ছোট।

মামুন বলেন, গরিব মানুষের পকেটে টাকা নেই। এত দামে কে খাবে? ভাত, ভাজি, পাতলা ডাল ছাড়া আর কিছুই বিক্রি হয় না। সারাদিনে ২ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এটি কোন কাজের না। কর্মচারী বরখাস্ত। নিজে রান্না করেন, নিজেই পরিবেশন করেন।

হাতিরঝিলে ভাঙা বিজিএমইএ ভবনের সামনে লোকমানের ভাতের দোকান। হাতিরঝিলের সীমানা প্রাচীরের পাশে ২৩ বছর বয়সী দোকানের বেঞ্চগুলি রাতে এবং দুপুরের খাবারের সময় গ্রাহকদের মধ্যে ভর্তি থাকে। আবদুল মতিন ১৪-১৫ বছর ধরে দোকানে কাজ করছেন।

ভাত খাওয়ার সময় তার সাথে কথা হয়। এক সময় কবুতর, কোয়েলের মাংসও বিক্রি হতো। সকালে, রুটির সাথে মুরগির কলিজা ভুনা ছিল। ষাট বছর বয়সী আবদুল মতিন বলেন, সেই দিন অতীত। শুধু পাঙ্গাস ও কই বিক্রি হয়। রুই, কাতলা, সরপুঁটি এমনকি তেলাপিয়াও বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এক মাস ধরে গরুর মাংস ও মুরগি রান্না করা হয় না। আবদুল মতিনের জবাব একই, এসব খাবার আজকাল বিক্রি হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *