অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের এলসি খুলছে না ব্যাংকগুলো।ডলার সংকট

0

সম্প্রতি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ১ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের ইমপোর্ট লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি খোলার দাবি আসে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকে। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫০ কোটি টাকার এলসিটি ফেরত দিয়েছে ব্যাংকটি। অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক বলেছে যে দেশের বাইরে বিভিন্ন পরিমাণের ৩৩টি পেমেন্টের বিপরীতে ১০৫ কোটি টাকা পাঠানোর অযোগ্য। উভয় ক্ষেত্রেই বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং বিনিময় হার হ্রাসকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এভাবে অনেক এলসি ফেরত দেয় সরকারি প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি খাতের এলসি না খোলার ঘটনাও বেশি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) এলসি খুলতে না পারার বিষয়টি সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। শুধু বিপিসি নয়, ব্যাংকগুলোও এলসি স্থাপন ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায় পরিশোধে অপারগতা দেখাচ্ছে। এর প্রধান কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায় পরিশোধের জন্য ডলার বিক্রির হার হিসাব করে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেট ৯৫ টাকা। কিন্তু বাজার থেকে ব্যাংক কিনতে হয় ১০৮ থেকে ১১২ টাকায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধানত জ্বালানি, সারসহ প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির বিপরীতে সরকারকে ডলার সহায়তা প্রদান করে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার না দিলে রেমিট্যান্স ও রপ্তানির কারণে আসা টাকা দিয়ে এলসি খুলতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রতি ডলারে বিনিময় হারের ক্ষতি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা। এ কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো এলসি ফেরত দিচ্ছে।

কোন ব্যাংকে সরকারি এলসি খোলা হবে, তা বেশিরভাগই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংক বেশিরভাগই এ ধরনের এলসি খোলার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে পাঠায়। এ অবস্থায় গত ১ আগস্ট ও ২৮ জুলাই সোনালী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে সমস্যার কথা উল্লেখ করে চিঠি দেয়।

এলসি না খোলার ব্যাখ্যায় রূপালী ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও বিনিময় হার হ্রাস সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো ১৫০টি এলসি খোলা হয়েছে। এই এলসি খোলা হলে ব্যাংকের ২৬ কোটি টাকা লোকসান হবে। তাই খোলা সম্ভব নয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার দিলে এলসিটি স্থাপন করা সম্ভব হবে। সোনালী ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রায় ৩৩টি বহির্মুখী রেমিটেন্স করা সম্ভব নয়, বাজার থেকে ডলার কিনে এলসির দায় মেটাতে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে। এর আগে ঋণ পরিশোধে ডলার দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।

রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল-মাসুদ এলসি ফেরত নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি  বলেন, সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার কিছুটা সংকট রয়েছে। এই মুহূর্তে কোনো জরুরি এলসি ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। তাদের বিশেষ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) অনেক এলসি খুলতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় প্রায় ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ২৫০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি আয় ছিল ৪ হাজার ৯২৫ মিলিয়ন ডলার। এ কারণে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩২৫ মিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ১৫ শতাংশ কমে ২,১০৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে চলতি হিসাবে ১ হাজার ৮৭০ মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, তিন মিলিয়ন ডলারের বেশি এলসি তদারকির শুরুতে আন্তর্জাতিক রেট ও আমদানিকারকের ঘোষিত হারের মধ্যে অমিল ছিল। এর জন্য কিছু এলসি ফেরত পাঠানো হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক হারের চেয়ে বেশি হার দেখানোর অন্যতম কারণ হতে পারে মানি লন্ডারিং। এ ছাড়া দেশের বাজারে বেশি দামে পণ্য বিক্রির সুযোগ নিতে এলসিতে বেশি দাম দেখানো যেতে পারে। তিনি বলেন, আপনি নিজে ডলার খুঁজে না পেলে আপাতত এলসি না খুলতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সরকারী বা প্রাইভেট এলসি যাই হোক না কেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সহায়তা প্রদান করে না যদি না এটি একটি অপরিহার্য পণ্য হয়। কারণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। খুব বেশি ডলার বিক্রি করা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৭৮২ মিলিয়ন ডলার। এলসি খোলা কমে যাওয়া এবং রেমিট্যান্স পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

খোলাবাজারে নগদ ডলারের দাম কমেছে ১১৩ টাকা। এর আগে, এটি ১০ ​​আগস্টে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে সর্বোচ্চ ১১৯ টাকা হয়েছিল। সেখান থেকে রবিবার এটি কিছুটা কমে ১১৫-এ দাঁড়ায়। তবে চলতি বছরের শুরুতে খোলা বাজারে ডলারের দাম ছিল ৯০ টাকার কাছাকাছি। খোলা বাজারে দরপতন হলেও ব্যাংকের ডলারের দর আগের মতোই রয়েছে। গতকাল এলসি খোলা হয়েছে ১০৯ থেকে ১১২ টাকায়। ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রার কাছ থেকে ১০৯ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স ডলার কিনেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *