সরকার আরও বাজেট সহায়তা চাইছে

0

বহুজাতিক সংস্থা থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে সরকারি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। গত তিন অর্থবছরে সরকার বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ৫৮৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার বাজেট সহায়তা পেয়েছে। চলতি অর্থবছরে ১৮৬ কোটি  ডলার নেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অর্থনীতির ওপর বর্তমান চাপ মোকাবেলায় সরকারের এ ধরনের ঋণ আগামী অর্থবছরেও বাড়বে। বহুজাতিক সংস্থাকে বাজেট সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার আগামী তিন অর্থবছরে বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে অন্তত ৭০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করছে।

সরকার বাজেট বাস্তবায়ন বা বাজেট ঘাটতি মেটাতে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেয়। বিদেশী উৎস থেকে ধার নেওয়া সরকার বিভিন্ন জরুরী কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারে, যাকে বলা হয় বাজেট সহায়তা। এ ছাড়া সরকার প্রকল্প ঋণ নেয়। বর্তমান সংকটে সরকার বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকার প্রয়োজনীয় রাজস্ব আদায় করতে না পারলে সরকার বাজেট সহায়তা নেয়। বাংলাদেশে রাজস্ব আদায় বাড়ছে না।

ফলে বাজেট সহায়তা নিতে হয়। কঠোর সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে বাজেট সহায়তা বাড়বে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, করোনার সময়ে গৃহীত বাজেট সহায়তার সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। কারণ এই বৈদেশিক সাহায্য না থাকলে গণ টিকাদান কার্যক্রম ব্যাহত হতো। এখন যেসব ঋণের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো দেখতে হবে কোন শর্তে সরকার এসব ঋণ নিচ্ছে এবং কোথায় বিনিয়োগ করছে। কারণ আইএমএফ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ ধরনের ঋণের কিছু সংস্কারের শর্ত দেবে। তিনি মনে করেন, সংস্কারগুলো সঠিকভাবে করা গেলে সরকারের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বাড়বে।

মহামারীর মধ্যে বিদেশী অংশীদাররা উদারভাবে বাংলাদেশের পক্ষে এসেছেন। যদিও বিশ্বব্যাংক এবং এডিবি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দিয়ে আসছে, জাইকা সাধারণত এ ধরনের ঋণ দেয় না। যাইহোক, সংস্থাটি দুই দফা বাজেট সহায়তায় বাংলাদেশকে ৬২ কোটি দিয়েছে, যার সবগুলোই মওকুফ করা হয়েছে। বাংলাদেশও এআইআইবি থেকে বাজেট সহায়তা পেয়েছে।এডিবি এর সহ-অর্থদাতা হিসাবে, সংস্থা তিনটি স্কিমে ১১৫ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে, যার বেশিরভাগই ছাড় দেওয়া হয়েছে।

ইডিসিএফ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানির কেএফডব্লিউ, ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, এএফডি এবং আইএমএফ থেকেও বাংলাদেশ বাজেট সহায়তা পেয়েছে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন কারণে গত তিন অর্থবছরে বাজেট সহায়তার জন্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে যেতে হয়েছে। তার মধ্যে একটি মহামারী করোনা। করোনার সময় সরকারকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভ্যাকসিন কিনতে, ব্যবসায়ীদের সহায়তা, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করতে বেশি খরচ করতে হয়েছে। কিন্তু ওই সময়ে রাজস্ব আয় কমেছে। ফলে সরকারকে বাজেট সহায়তা নিতে হয়েছে। এ বছর যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। এ যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস, সার ও খাদ্যদ্রব্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। সরকারের আমদানি ব্যয় ও ভর্তুকির কারণে ব্যয় বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *