পরিবহন খাতে জ্বালানি খরচ কমানোর কথা ভাবছে।আগামী সপ্তাহে লোডশেডিং নিয়ে নতুন পরিকল্পনা

0

চলমান জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট থেকে উত্তরণে সরকার বেশ কিছু সাশ্রয়ী উদ্যোগ নিয়েছে। ডিজেল পাওয়ার প্ল্যান্ট সাময়িকভাবে বন্ধ, এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং এবং এয়ার কন্ডিশনার (এসি) ব্যবহার বন্ধ করা। তবে সরকারের এসব উদ্যোগে তেমন জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই নতুন কিছু উদ্যোগের কথা ভাবছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে পরিবহন খাতে জ্বালানি খরচ কমানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে। এছাড়াও লোডশেডিং নিয়ে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হতে পারে। চলতি সপ্তাহের শেষে বা আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। চাহিদা মেটাতে কম দামে জ্বালানি পাওয়া যাবে এমন বাজার খোঁজা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় শেষ উপায় হিসেবে জ্বালানির দাম সহনীয় পর্যায়ে বাড়ানো হতে পারে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও সাংবাদিকদের বলেন, কয়েক সপ্তাহ মনিটরিং করে পরবর্তী পরিকল্পনা করা হবে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজেলের ব্যবহার বন্ধ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিলে বেসরকারি পর্যায়ে জেনারেটরে ডিজেলের ব্যবহার বাড়বে। যে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে, সেগুলো থেকে বিদ্যুৎ না কিনলেও চুক্তি অনুযায়ী এসব প্ল্যান্টের মালিকদের প্রতি মাসে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকা দিতে হবে। দেশের ১০টি ডিজেল-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বার্ষিক জ্বালানী চাহিদা মোট ডিজেল সরবরাহের ৩-৪ শতাংশ। ফলে সরকারের সিদ্ধান্তে খুব বেশি জ্বালানি সাশ্রয় হবে না। দেশের মোট জ্বালানি তেলের ৭০ শতাংশই ডিজেল (৫ মিলিয়ন টন)। এই ডিজেলের ৭০ শতাংশ পরিবহন খাতে এবং ২০ শতাংশ কৃষি খাতে ব্যবহৃত হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবহনে জ্বালানি সাশ্রয়ী হলে সুবিধা আসবে। সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের ব্যবহার কীভাবে কমানো যায় তা নিয়ে কাজ করছে জ্বালানি বিভাগ। বিশেষ করে পরিবহন খাতে ডিজেলের ব্যবহার কমাতে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বুয়েটের অধ্যাপক এম তামিম  বলেন, পরিবহন খাতে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি খরচ হয়। এই খাতে সঞ্চয় অনেক সুফল বয়ে আনবে। পুরানো যানবাহন, যাদের ইঞ্জিন বেশি তেল ব্যবহার করে, তাদের ডিকমিশন করার বিষয়ে কঠোর হওয়া উচিত। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে গণপরিবহনের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

এদিকে খরচ সাশ্রয়ের উদ্যোগ হিসেবে গত মঙ্গলবার থেকে এলাকাভিত্তিক সময়সূচি অনুযায়ী লোডশেডিং শুরু করেছে সরকার। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হলেও দেশের অধিকাংশ এলাকায় কয়েক দফায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে। কোথাও কোথাও ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। তাই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবছে সরকার। এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, এক সপ্তাহ মনিটরিং করে লোডশেডিং নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা করা হবে। তিনি বলেন, কোনো কোনো গ্রামে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। সেখানে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা এক সপ্তাহ পর জানানো হবে। কয়েক মাস পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। কারণ, এই সময়ে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চলছে, আদানি (ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ) চলছে। নসরুল হামিদ বলেন, সরকার কম দামে জ্বালানির বাজার খুঁজছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রায় সব জ্বালানি তেলই আমদানি করতে হয়। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমানোর বিভিন্ন উপায় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা, প্রাইভেট কারের ব্যবহার কমানো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের আনা-নেওয়ার জন্য বড় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারসহ অন্যান্য উদ্যোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গৃহীত ব্যবস্থা যদি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে, তাহলে ভালো। তা না হলে শেষ উপায় হিসেবে জ্বালানির দাম বাড়ানো হতে পারে। কিন্তু এটা সহনীয় হতে হবে। গত ৭ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন নসরুল হামিদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *