সিইউএফএলে উৎপাদন বন্ধ।গ্যাস সংকট

0

গ্যাসের অভাবে বন্ধ দেশের অন্যতম বৃহৎ সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)। সরকারের জ্বালানি সংরক্ষণ প্রকল্পের অধীনে গ্যাস রেশনিংয়ের কারণে সিইউএফএলের উৎপাদন বন্ধ ছিল। কারখানার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কবে নাগাদ এ কারখানা চালু হবে তা অনিশ্চিত।

পেট্রোবাংলা ও বিসিআইসির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, গ্যাসের ভয়াবহ সংকট শুরু হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বৈশ্বিক জ্বালানি খাতে তীব্র সংকট তৈরি করেছে। এই সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী তেল ও গ্যাসের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে, বিশেষ করে রাশিয়া এবং ইরানের গ্যাস প্রাকৃতিকভাবে বিশ্বের সরবরাহ নেটওয়ার্কে প্রবাহিত হচ্ছে না। এতে পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানি কমাতে বাধ্য হয়েছে। স্পট মার্কেটে 1 মিলিয়ন বিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) এলএনজির দাম ১০ ডলারে বর্তমানে ৫৬-৫৭ ডলারে আটকে আছে। এত বেশি দামে এলএনজি কেনা সম্ভব না হওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এ অবস্থায় দেশের সার্বিক গ্যাস সরবরাহ কমেছে।

সারাদেশের গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে রেশনিংয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি সার কারখানা ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাসের বরাদ্দের পরিমাণও উল্লেখ করেছে পেট্রোবাংলা। সরকার সার কারখানার জন্য ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ করেছে। এদিকে কাফকো ও শাহজালাল সার কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত থাকবে। এ দুটি প্লান্টের মধ্যে কাফকো ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট এবং শাহজালাল ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করছে। সিইউএফএল বা আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার প্ল্যান্টকে অবশিষ্ট ৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করে উৎপাদন চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল আশুগঞ্জ সার কারখানা। গতকাল থেকে কারখানার সার উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। প্ল্যান্ট চালু রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন ছিল। বর্তমানে এত গ্যাস সরবরাহ করার শর্ত পেট্রোবাংলার নেই।

পেট্রোবাংলায় গ্যাস সরবরাহ কবে স্বাভাবিক হবে তাও অনিশ্চিত উল্লেখ করে সূত্র জানায়, গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার আগে সিইউএফএল চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ বর্তমানে বরাদ্দকৃত ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তুলনামূলক ভালো কারখানায় উৎপাদনে ব্যবহৃত হবে। যাতে ব্যবহৃত গ্যাস থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন পাওয়া যায়। কাফকো, শাহজালাল ও আশুগঞ্জ সার কারখানা সিইউএফএলের চেয়ে ভালো। ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করে তিনটি কারখানায় সার উৎপাদন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিসিআইসির এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাস সার কারখানায় জ্বালানি নয়, কাঁচামাল। এই গ্যাস ব্যবহার করে ইউরিয়া সার তৈরি করা হয়। এতে সার কারখানায় গ্যাসের কোনো বিকল্প থাকে না এবং গ্যাস সরবরাহ একটি নির্দিষ্ট মাত্রার নিচে নেমে গেলে সার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রামে বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাস রয়েছে তাতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সিইউএফএলকে গ্যাস সরবরাহ করার মতো অবস্থায় নেই বলেও স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ও সংলগ্ন এলাকায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির কারণে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গত কয়েকদিন ধরে ৩১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছিল। স্পট এলএনজি কেনা বন্ধ থাকায় কর্ণফুলীর গ্যাস সরবরাহ ২৭ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে। ফলে অনেক চাপে গ্যাস সরবরাহ করছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এর মাধ্যমে সিইউএফএল গ্যাস বন্ধ করে আবাসিক, সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশন বা শিল্প প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হচ্ছে।

আনোয়ারায় কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ সার কারখানা সিইউএফএল-এর পূর্ণ ক্ষমতায় চালানোর জন্য ৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। কারখানাটিতে দৈনিক ২৪,০০০ বস্তা ইউরিয়া সার এবং ১,০০০ টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (প্রকৌশল সেবা বিভাগ) প্রকৌশলী সারোয়ার হোসেন বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে সিইউএফএলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। কারখানাটি ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ নিচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *