কুয়াকাটা ধাপে ধাপে পর্যটকদের হয়রানি।হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গিয়ে নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন পর্যটকরা। প্রতিবাদ করলে অপমানিত হতে হয়। রেহাই পাচ্ছেন না নারী পর্যটকরাও। এতে ক্ষুব্ধ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকরা। এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিলে পর্যটকরা এ সৈকত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। এতে কুয়াকাটার পর্যটনে ধস নেমে আসতে পারে।
পর্যটকদের অভিযোগের মধ্যে রয়েছে আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া, পচা খাবার পরিবেশন করা এবং খাবারের হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া, যাত্রীবাহী বাসে পর্যটকদের লাঞ্ছিত করা এবং মারধর করা, ভাড়া করা মোটরবাইক এবং ট্যুরিস্ট ফটোগ্রাফারদের কাছ থেকে প্রতারণা ও বাড়তি টাকা আদায় করা।
এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের সঙ্গে বাস শ্রমিকদের অসতর্ক আচরণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। ইতোমধ্যে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন তারা। তারা গত সোমবার কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে এক বৈঠক করে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন এবং এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে কুয়াকাটা বাসস্ট্যান্ডে পর্যটক পরিবারের ওপর হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার, বাস স্টাফদের দ্বারা পর্যটকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার বন্ধ, কুয়াকাটা থেকে আসা পর্যটকদের পছন্দের বাসে ভ্রমণের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং পর্যটকদের হয়রানি বন্ধ করা। – পটুয়াখালীর বসাক বাজারে বাস মালিক সমিতির চেকপোস্টে হয়রানি বন্ধ করা।
আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন (টোওয়াক), কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (কুটুম), ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশন, ট্যুরিস্ট বোট ওনার্স কো-অপারেটিভ অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন ও রিসোর্ট মালিকরা।
কুয়াকাটায় গত শনিবার বিকেলে এক পর্যটক পরিবারকে বাসের কর্মচারীরা লাঞ্ছিত ও মারধর করেছে। পরে ভুক্তভোগীরা ৯৯৯ নম্বরে সাহায্যের জন্য কল করলে মহিপুর থানার পুলিশ তাদের উদ্ধার করে বাসের চালক কামাল হোসেন ও কন্ডাক্টর জামাল হোসেনসহ পর্যটকদের থানায় নিয়ে যায়। পরে মহিপুর থানার ওসি আবুল খায়ের দুজনের মধ্যে আলোচনা করে পর্যটক পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
পর্যটক, মোটরসাইকেল চালক এবং পর্যটক ফটোগ্রাফারদেরও অভিযোগ রয়েছে। রেন্ট-এ-কার মোটরসাইকেল চালকরা পর্যটকদের সঙ্গে ভাড়া ঠিক করে কিছুদূর গিয়ে বলে, ‘গাড়িতে তেল ফুরিয়ে গেছে, যাওয়া যাবে না’। এক্ষেত্রে পর্যটকদের চুক্তির পুরো টাকা পরিশোধ করতে হয়।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট ফটোগ্রাফার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস শেখ বলেন, প্রত্যেক ফটোগ্রাফারকে পর্যটকদের ছবি তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং প্রিন্ট করা কয়েকটি ছবি তুলতে পারবেন। এই নির্দেশ লঙ্ঘনের জন্য ইতিমধ্যেই দুই ফটোগ্রাফারকে সৈকত থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আজীবনের জন্য সমিতি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যারা পর্যটকদের হয়রানি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পটুয়াখালী জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মৃধা বলেন, অসদাচরণ রোধে শ্রমিক সংগঠনের উচিত বাস কন্ডাক্টরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটায় প্রায় ১৩০টি আবাসিক হোটেল ও মোটেল রয়েছে। তাদের মধ্যে ৭৫ জন তাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বাইরের ৫৫টি হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া নিলে তাদের কিছু করার নেই।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘জেলা প্রশাসন আমাকে লিখিতভাবে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিলে সাত দিনের মধ্যে সবকিছু বদলে দেব। কিন্তু না লিখলে কিছু করতে পারব না।’
পটুয়াখালীর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম জানান, বিভিন্ন অভিযোগে কুয়াকাটার বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। কুয়াকাটা জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক হাছনাইন পারভেজ জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সজাগ রয়েছে।