নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলা।দেড় শতাধিক হিন্দু নারী ও শিশু গৃহহীন
নড়াইলের লোহাগড়ার দিঘলিয়ার সাহাপাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় স্থানীয় হিন্দুদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ কারণে দেড় শতাধিক নারী ও শিশু ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই দরজা বন্ধ করে বসবাস করছেন। বর্তমানে এলাকার বিভিন্ন মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। র্যাবও টহল দিচ্ছে।
রাজনীতিবিদ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে ফেসবুকে মহানবী (সা.) অবমাননার অভিযোগে খুলনা থেকে আকাশ সাহা (২০) নামে এক ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার লোহাগড় আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোরশেদুল আলম তাকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তদন্ত কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই মাকফুর রহমান ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে জাতীয় হিন্দু মহাজতের একটি দল।
শনিবার রাতে তাকে আটক করা হয়। শুক্রবার দিঘলিয়া গ্রামের কচি সরদার বাদী হয়ে লোহাগড় থানায় আকাশের নামে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলা দায়ের করেন।
ফেসবুকে রাসুল (সা.) কে নিয়ে আকাশের কটূক্তি করায় শুক্রবার সন্ধ্যায় দিঘলিয়া বাজারে হিন্দুদের ৬টি দোকান ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। একটি মন্দিরে আগুন দেওয়াসহ তিনটি মন্দির ভাংচুর করা হয়। এ ছাড়া সাহাপাড়া হিন্দুদের ৫টি বসতঘর ও তাদের আসবাবপত্র ভাংচুর ও নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়। ঘটনার সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তরুণ সাহা ও তার ভাই মকুমরেশ সাহাকে বিক্ষুব্ধ জনতা পিটিয়ে আহত করে। এ ছাড়া এ ঘটনা ঠেকাতে স্থানীয় ইউপি সদস্য জান্নাত মৃধাকে জনতা মারধর করে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন মাশরাফি।
দিঘলিয়া সাহাপাড়ার গোবিন্দ সাহা জানান, সন্ধ্যায় শতাধিক লোক তার একটি বাড়ি ভাংচুর করে এবং বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা এখনও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। শনিবার রাতে পুলিশ পাহারায় থাকা সত্ত্বেও কাছের অনিন্দ সাহার কাছ থেকে একটি গরু চুরি হয়েছে।
স্থানীয় পলাশ সাহা জানান, তার পরিবারের ১৪ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৫০ হাজার টাকা লুট হয়েছে। একই পাড়ার মালা সাহা জানান, তার কাছ থেকে ২ ভরি স্বর্ণ ও ১৫ হাজার টাকা লুট করা হয়েছে। তারা খুব ভয় পায়। গ্রামের অর্ধেক মানুষ আতঙ্কে সরে গেছে।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ার কলেজ ছাত্র আকাশ ফেসবুকে মহানবী (সা.) সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্য লিখে পোস্ট করলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। এর প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে দিঘলিয়া বাজারে জড়ো হন শত শত মানুষ। সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ জনতা আকাশকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে তারা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসন শটগান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সবাই একসাথে থাকতে চাই। নিয়ম হলো সবাই স্বাধীনভাবে বাঁচবে। কারো দোষে সবাইকে আক্রমণ করা যায় না। আমরা আপনার পাশে থাকব। তোমরা আমাদের ভাই-বোনের মতো। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী আনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।
এছাড়াও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোতার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম কে রায় ও সংখ্যালঘু অধিকার ফোরাম বাংলাদেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পবিত্র মিস্ত্রীর নেতৃত্বে একটি দল। তারা ঘটনার সময় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা এবং ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জানান, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি ঠেকানোর চেষ্টা করেও পারেননি। হামলায় জড়িতদের চিনতে পেরেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা সবাই বহিরাগত।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু হেনা মিলন জানান, এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে এবং বাজারের দোকানপাট খোলা রয়েছে।